এক হাতে তাঁর আইন প্রশাসনের গুরু দায়িত্ব,
অন্য হাতে সাহিত্য ও স্বদেশ জাগরণের মায়াপ্রদীপ।
শিক্ষিত, গম্ভীর, যুক্তিবাদী, অথচ অন্তরে এক প্রজ্জ্বলিত দেশপ্রেম।
ইংরেজ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েও তিনি উপলব্ধি করেছিলেন,
এই দেশের আত্মা পরাধীনতার শৃঙ্খলে জর্জরিত, নিষ্পেষিত।
তিনি বলেছিলেন -
“যে মাটি আমাদের প্রাণ, তাকে বন্দনা করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।”
আমাদের সুপ্রাচীন অথর্ব বেদ বলেছে - ধরিত্রী আমাদের মাতা, আমরা সবাই তার সন্তান।
তাঁর কলমে প্রথম উচ্চারিত হল
দেশমাতৃকার বন্দনা মন্ত্র - বন্দে মাতরম।
এ যেন এক জীবন্ত করুণাময়ী দেবীর চিত্রকল্প,
অনন্ত শক্তির আধার, এক বীজমন্ত্র।
বঙ্কিমের চোখে মাতৃভূমি, স্বদেশ কেবল মাটি বা ভূমি দিয়ে গড়া নয়। তিনি এক দেবী, জাগ্রত চেতনার জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি।
বঙ্কিমচন্দ্র শুধু সাহিত্যিক নন তিনি নবজাগরণের স্থপতি,
প্রথম জাতীয়তাবাদের ঐশী উদগাতা।
তাঁর লেখায় জাতীয় চেতনা যেমন যুক্তিবোধে গেছে মিশে, তেমনি অপার মমতায় প্রবাহিত হয়েছে
মানবতার নদী।
তিনি চেয়েছিলেন এমন এক ভারতবর্ষ,
যেখানে জ্ঞান হবে শক্তি,
আর শক্তিতে হবে সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও শান্তির বিচ্ছুরণ।
ধর্মতত্ত্ব গ্রন্থে তিনি লিখেছিলেন -
আমি তাহাকে নমস্কার করি, যিনি একাধারে শাক্যসিংহ, যিশু খ্রীষ্ট, মোহম্মদ, রামচন্দ্র। যিনি সর্ববলাধার, সর্বগুনাধার, সর্বধর্মাবেত্তা, সর্বত্র প্রেমময়। তিনি ঈশ্বর হউন বা না হউন, আমি তাহাকে নমস্কার করি।
তিনি বলেছিলেন- যাহা লিখলে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা যায় তাহাই লিখিবে। যাহা লিখিলে সমাজের হিতসাধন করা যায় তাহাই লিখিবে।
আজ, ‘বন্দেমাতরম’- রচনার দেড়শো বছর পরে,
আমরা নতুন করে উপলব্ধি করি সেই সঞ্জীবনী ধ্বনি, সেই মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র, সমগ্র জাতিসত্তার পুনর্জাগরনের চিরন্তন স্তোত্র।
এ এক আত্মার প্রার্থনা, এক শাশ্বত রক্তের স্পন্দন।
যে মাটিতে প্রথম সূর্যোদয়,
যে নদীর জলে কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকারও স্নিগ্ধ—
সে-ই আমাদের মা,
সে-ই আমাদের ঐতিহ্যশালী ভারতবর্ষ।
এই মন্ত্র, এই শব্দব্রহ্ম
শুধু অতীতের গৌরব নয়, ভবিষ্যত প্রগতির দিশা।
বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন—
যে মাটিতে তোমার জন্ম,
তার প্রতি প্রেমই প্রকৃত দেশপ্রেম।
আর দেশপ্রেমই হলো ধর্ম।
বন্দে মাতরম!
উচ্চারণে আজও আন্দোলিত হয় রক্ত।
এই শব্দেই ওঠে নবযুগের সূর্য।
বঙ্কিমচন্দ্রের কলমে লেখা এই মহামন্ত্র
আজও আমাদের হৃদয়কে শেখায়
প্রেমই পরম শক্তি,
আর মাতৃভূমিই সর্বোচ্চ আরাধ্যা।
বঙ্কিমচন্দ্র কবিতা রচনার মধ্যে দিয়েই
শুরু করেছিলেন তাঁর সাহিত্যের পথ চলা।
ভালো আবৃত্তি করতেন তিনি।
কবি ক্রান্তদর্শী, এক চলমান সাধক।
এক চিঠিতে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন-
যদি আমার সব লেখা গঙ্গায় ডুবে যায়
তাহলেও আপত্তি নেই। এই একটি স্তোত্র
অনন্তকাল জীবিত থাকবে,
তা হয়ে উঠবে এক অনন্য সংগীত
এবং জয় করবে মানুষের হৃদয়।
বড় মেয়ে শরৎকুমারীকে বলেছিলেন -
আজ থেকে ২০ বছর পরে
এই গান লইয়া আসমুদ্র হিমাচল
মাতিয়া উঠিবে,
দেখে নিও।
" বন্দে মাতরম।
সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং শস্যশ্যামলাং মাতরাম ।
বন্দে মাতরম।"
- কবি জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য
কোলকাতা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
৭ই নভেম্বর ২০২৫


.jpeg)

