সময় থেমে থাকেনা। সেই ১৯৮৯-৯০ সন দৃশ্য ও শ্রবণ মাধ্যমে সিনেমা তখন বলা যায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। টেলিভিশন সেভাবে জাঁকিয়ে বসেনি আমাদের ড্রয়িং রুমে। সেই সময়ে একটি স্টিল ছবি তোলা যেখানে আনেক ব্যয়সাপেক্ষ ও ঝক্কির বিষয় সেখানে ত্রিপুরার মত এক প্রান্তিক রাজ্য থেকে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা অনেকটা পাগলামির সামিল বলা যায়।
তখন সেলুলয়েডে ছবি বানানোর জন্য ক্যামেরা থেকে ল্যাবে প্রসেসিং অব্দি সবটাই রাজ্যের বাইরে থেকে করতে হতো যা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ বিষয়।কিন্তু ছবি তৈরির পোকা মাথায় কিলবিল করছে এবং তার জন্য দায়ী আমার বড়ভাই প্রয়াত কবি দীপঙ্কর সাহা। সেই সময়টায় আমি হিন্দি বাংলা বাজারি ছবি গোগ্রাসে গিলছি বলা যায়।
পকেটে পঞ্চাশ পয়সার ব্যবস্থা হলে স্কুল পালিয়ে সিনেমা হলের সামনের সাড়িতে বসা যাকে আমরা আদর করে গান্ধী ক্লাস বলতাম। এমনকি আশেপাশের শহর বা গঞ্জে পছন্দের সিনেমা আসলে দীর্ঘ পথ হেটে গিয়েছি তা দেখার জন্য।সিনেমা যে শুধুমাত্র বিনোদন বা হুলোর নয় তা দাদার কাছে জানলাম বা প্রাথমিক পাঠ নিলাম। দীপঙ্কর সাহা ত্রিপুরা থেকে প্রতি বছর ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিভিন্ন শহরে যেত। আসার সময় সাথে একগাদা সিনেমা বিষয়ে ম্যাগাজিন নিয়ে আসতো এবং সেইগুলো ঘাটতে ঘাটতেই এক বিকল্প সিনেমার সন্ধান যেন পাওয়া গেল।
এরপর আগরতলা ফিল্ম সোসাইটি, সিনে ডেল্ভ ও ইস্কাসের সিনেমা প্রদর্শনীতে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সাথে পরিচিত হলাম। কোথাও পড়েছিলাম যে একটি সিনেমার ভ্রূণ কোন একটি শব্দ বা নিউজ কাটিং থেকে জন্ম নিতে পারে। তেমনি আমি বেঙ্গালুরু শহরে দেখেছিলাম যে এক দোকানের সামনে মিকি মাউস সেজে এক বহুরুপী শিশুদের আনন্দ দিচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল লোকটি অনিচ্ছাতেই শুধুমাত্র পেটের দাঁয়ে এই কাজটি করছে। সেখান থেকেই চরিত্রটি ডালা পালা মেলতে শুরু করে। কালী নাচিয়ে থেকে মিকি হওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে এক লোকশিল্পীর চিত্ররূপ সৃষ্টি হয় যা রূপান্তর তৈরির প্রাথমিক পর্ব।
১৯৯১ সনের ৩১ আগস্ট রূপান্তর সেন্সর সার্টিফিকেট পায়। ছবিটি এরপর বানিজ্যিকভাবে রূপসী সিনেমা হলে মুক্তি পায়। প্রদর্শিত হয় কলকাতার নন্দন সহ বেংগালুরে মিনি সন্তোষ সিনেমা হলে। ছবিটি বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ও বিশেষ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে রূপান্তর উদ্বোধনী ছবি হিসেবে কলকাতার নন্দনে প্রদর্শন । এছাড়াও জামশেদপুর ও শিলং শহরে চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয় । কলকাতার গোরকি সদনের বিশেষ প্রদর্শনীতে ছবিটি অন্তভুক্ত হয়।
প্রায় ২৮ বছর বাদে সেই গোরকি সদনেই ২০১৮ সনের ১০ আগস্ট রূপান্তর ছবিটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রবর্তন করা হয় “রূপান্তর চলচ্চিত্র সন্মান” এবং এই সন্মাননা দেয়া হয় ত্রিপুরার চলচ্চিত্র বিকাশে অসধারন অবদানের জন্য চিত্রগ্রাহক বিজয় আনন্দ সব্বেরওয়ালকে। এই সন্মাননা পর্ব শেষে প্রদর্শিত হয় “রূপান্তর” ছবির সিকুয়েল “বুনো”।
প্রতিবেদনঃ দেবাশীষ সাহা, চলচ্চিত্রকার
আগরতলা,ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে প্রতিবেদক
৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৮ইং
তখন সেলুলয়েডে ছবি বানানোর জন্য ক্যামেরা থেকে ল্যাবে প্রসেসিং অব্দি সবটাই রাজ্যের বাইরে থেকে করতে হতো যা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ বিষয়।কিন্তু ছবি তৈরির পোকা মাথায় কিলবিল করছে এবং তার জন্য দায়ী আমার বড়ভাই প্রয়াত কবি দীপঙ্কর সাহা। সেই সময়টায় আমি হিন্দি বাংলা বাজারি ছবি গোগ্রাসে গিলছি বলা যায়।
পকেটে পঞ্চাশ পয়সার ব্যবস্থা হলে স্কুল পালিয়ে সিনেমা হলের সামনের সাড়িতে বসা যাকে আমরা আদর করে গান্ধী ক্লাস বলতাম। এমনকি আশেপাশের শহর বা গঞ্জে পছন্দের সিনেমা আসলে দীর্ঘ পথ হেটে গিয়েছি তা দেখার জন্য।সিনেমা যে শুধুমাত্র বিনোদন বা হুলোর নয় তা দাদার কাছে জানলাম বা প্রাথমিক পাঠ নিলাম। দীপঙ্কর সাহা ত্রিপুরা থেকে প্রতি বছর ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিভিন্ন শহরে যেত। আসার সময় সাথে একগাদা সিনেমা বিষয়ে ম্যাগাজিন নিয়ে আসতো এবং সেইগুলো ঘাটতে ঘাটতেই এক বিকল্প সিনেমার সন্ধান যেন পাওয়া গেল।
এরপর আগরতলা ফিল্ম সোসাইটি, সিনে ডেল্ভ ও ইস্কাসের সিনেমা প্রদর্শনীতে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সাথে পরিচিত হলাম। কোথাও পড়েছিলাম যে একটি সিনেমার ভ্রূণ কোন একটি শব্দ বা নিউজ কাটিং থেকে জন্ম নিতে পারে। তেমনি আমি বেঙ্গালুরু শহরে দেখেছিলাম যে এক দোকানের সামনে মিকি মাউস সেজে এক বহুরুপী শিশুদের আনন্দ দিচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল লোকটি অনিচ্ছাতেই শুধুমাত্র পেটের দাঁয়ে এই কাজটি করছে। সেখান থেকেই চরিত্রটি ডালা পালা মেলতে শুরু করে। কালী নাচিয়ে থেকে মিকি হওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে এক লোকশিল্পীর চিত্ররূপ সৃষ্টি হয় যা রূপান্তর তৈরির প্রাথমিক পর্ব।
১৯৯১ সনের ৩১ আগস্ট রূপান্তর সেন্সর সার্টিফিকেট পায়। ছবিটি এরপর বানিজ্যিকভাবে রূপসী সিনেমা হলে মুক্তি পায়। প্রদর্শিত হয় কলকাতার নন্দন সহ বেংগালুরে মিনি সন্তোষ সিনেমা হলে। ছবিটি বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ও বিশেষ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে রূপান্তর উদ্বোধনী ছবি হিসেবে কলকাতার নন্দনে প্রদর্শন । এছাড়াও জামশেদপুর ও শিলং শহরে চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয় । কলকাতার গোরকি সদনের বিশেষ প্রদর্শনীতে ছবিটি অন্তভুক্ত হয়।
প্রায় ২৮ বছর বাদে সেই গোরকি সদনেই ২০১৮ সনের ১০ আগস্ট রূপান্তর ছবিটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রবর্তন করা হয় “রূপান্তর চলচ্চিত্র সন্মান” এবং এই সন্মাননা দেয়া হয় ত্রিপুরার চলচ্চিত্র বিকাশে অসধারন অবদানের জন্য চিত্রগ্রাহক বিজয় আনন্দ সব্বেরওয়ালকে। এই সন্মাননা পর্ব শেষে প্রদর্শিত হয় “রূপান্তর” ছবির সিকুয়েল “বুনো”।
প্রতিবেদনঃ দেবাশীষ সাহা, চলচ্চিত্রকার
আগরতলা,ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে প্রতিবেদক
৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৮ইং