পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের দেশগুলোতে ভূত নিয়ে মাতামাতি চিরকালই একটু বেশি। তবে পশ্চিমের দেশগুলোও কিন্তু পিছিয়ে নেই! আমাদের ভূত চতুর্দশীর মতো ওদেরও 'Halloween' উদযাপন বহুকাল ধরে চলে আসছে।
বাংলা লোকসাহিত্যে ভূতের একটি বিশেষ প্রাধান্য প্রাচীনকাল থেকে চলে এসেছে। তাই পেত্নী, ব্রহ্মদৈত্য, শাকচুন্নি, আলেয়া, মামদোভূত --- ওরকম অসংখ্য নামের সাথে আমাদের পরিচয়ের শুরু ছেলেবেলায় ঠাকুমা-দিদিমাদের গল্পবলার দিনগুলো থেকে বা একটু বড়ো হয়ে পড়া বিভিন্ন লেখকের লেখা গল্প, উপন্যাস থেকে । এই প্রত্যেকটি নামের ভূতের কার্যকলাপের মধ্যে অনেক পার্থক্য, আর সেগুলোর ব্যখ্যাও রয়েছে প্রাচীন লোক-সাহিত্যে। কোনোটি মৃত অবিবাহিতদের ভূত, তো কোনোটি বিধবা নারীর আত্মার। ব্রহ্মদৈত্য ভূতকে আবার দয়ালু ভূত হিসেবেও ধরা হয়। বিশ্বাস, ব্রহ্মদৈত্য ভূতেরা কা রুর ক্ষতি করে না।
পশ্চিমী দেশগুলোতেও মরণোত্তর আত্মাদের কথা ভেবে উদযাপিত এক রাত্রিকালীন অনুষ্ঠান 'হ্যালোইন' (halloween) শব্দটি স্কটিশ ভাষার 'অল হ্যালোজ ইভ' কথা থেকে এসেছে। এই একটি রাতের উদযাপনকে বাংলায় অনুবাদ করলে বলা যায় 'শোধিত সন্ধ্যা' বা 'পবিত্র সন্ধ্যা' !
প্রাচীন ইউরোপীয় ধারণায় বিশ্বাস করা হতো 'অল হ্যালোজ ইভ' বা 'হ্যালোইন' এর রাতে জীবিতদের বিশ্বে অশরীরী আত্মারা আসতো নতুন দেহ পেয়ে জন্ম নেবার আশায়। খারাপ আত্মাদের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য পুরোহিতরা ছোট ছোট পাহাড়ে আগুন জ্বালিয়ে এর চারপাশে নাচতো, গাইতো আর, নানা জিনিস সেই আগুনে উৎসর্গ করতো ভোরের আলো ফোটার আগে অবধি। এভাবেই হতো উদযাপন।
দেশ ভেদে,কাহিনী ভেদে ভূতের নানা চারিত্রিক এবং কার্য-কলাপের পার্থক্য থাকলেও, সাধারণ মানুষের মনে শান্তিতে জীবন কাটানোর ইচ্ছেটা চিরকালের। জীবিত মানবকুলের সাচ্ছন্দ্য এবং দীর্ঘ জীবন কামনার পথে কোনো কালো ছায়া পড়ুক, সেটি কেউ চায় না।
দেশ ভেদে,কাহিনী ভেদে ভূতের নানা চারিত্রিক এবং কার্য-কলাপের পার্থক্য থাকলেও, সাধারণ মানুষের মনে শান্তিতে জীবন কাটানোর ইচ্ছেটা চিরকালের। জীবিত মানবকুলের সাচ্ছন্দ্য এবং দীর্ঘ জীবন কামনার পথে কোনো কালো ছায়া পড়ুক, সেটি কেউ চায় না।
মৃত্যু অবধারিত জেনেও আমরা মৃত্যুর মুখোমুখি হতে চাই না। তাই বিভিন্ন বিশ্বাসকে সাথে নিয়ে মৃত্যু- ভয়কে জয় করার চেষ্টা আমাদের মনে থেকেই যায়। যুগের পরিবর্তনের সাথে সেই বিশ্বাসগুলোর পরিবর্তন যতই আসুক না কেন, ভূত চতুর্দশী কিংবা হ্যালোউইন উদযাপন আমাদের চলতেই থাকবে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে, কোনো না কোনো নামে --- তা আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেনো !
জবা চৌধুরী, আটলান্টা
ছবিঃ সৌজন্যে জবা চৌধুরী
৬ই নভেম্বর ২০১৮ইং