মিথ্যে ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর ক্ষেত্রে সিপিএম আর কংগ্রেস একজন আরেকজনের পরিপূরক এবং সমার্থক। বিরোধীদের তরফ থেকে আসা এই ধরনের বিভ্রান্তিকর মন্তব্যে এখন আর কেউ কান দিচ্ছেন না। তাদের কথা কেউ শুনতে চায় না। আজ তারাই রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা নেই বলে দাবি করছেন,শুক্রবার কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ এনে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা। শুক্রবার চার অক্টোবর কংগ্রেস এবং সিপিআইএম মিথ্যাচার এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাজ্যে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করার চক্রান্ত করছে এবং তারা রাজ্যের জনগণকে ভুল বোঝাবার প্রয়াস নিচ্ছে এমনতর অভিযোগকে সামনে রেখে গোটা রাজ্যে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেয় প্রদেশ বিজেপি। তারই অঙ্গ হিসেবে এদিন আগরতলায় প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয় দলের তরফ থেকে। এদিনের মিছিলটি আগরতলা রবীন্দ্র ভবন থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্য, মন্ত্রী রতন লাল নাথ, মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, সহ অন্যান্য নেতৃত্ব ও কর্মী সমর্থকরা। পরে মিছিল থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বহুদিন ধরে বিরোধীরা মিথ্যে অপ্রচার ছড়িয়ে রাজ্যে অশান্তির পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করছেন। রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি খোঁজখবর না নিয়ে কোন কিছু যাচাই না করেই তারা এই ধরনের অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার করছে। এদের মিথ্যাচারের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তাই দলীয় সিদ্ধান্ত হয় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত করা হবে। তাই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এদিন ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মী সমর্থকরা মাঠে নেমেছেন । সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে ভুল তথ্য দিয়ে চক্রান্ত করার চেষ্টার প্রতিবাদস্বরূপ এই মিছিল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণের স্বার্থে বিজেপি সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশিত পথে রাজ্যের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। কিন্তু বিরোধীদের নজরে পড়ছে না রাজ্যের উন্নয়ন। তাই অপপ্রচারকে হাতিয়ার করে শুধু শুধু তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছু হবে না। মানুষজন তাদের চালকে অনেকদিন আগেই ধরে ফেলেছে। এক্ষেত্রে নিজেদেরকে সংযত না করলে রাজ্য থেকে দিনে দিনে তারা নির্মূল হয়ে যাবে।বিরোধীদের ভুল মন্তব্যে থেকে বিরত থাকার হুশিয়ারি দিলেন এদিন মুখ্যমন্ত্রী । নিজের বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, রাজ্যে ৩৫ বছর ধরে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছে বাম- কংগ্রেস দল। তবে মানুষ তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছে ২০১৮ সালেই। আজ এদের মুখোশ খসে পড়েছে। তাই আবারও ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করেছে বিরোধী কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেস দল।
এদিন প্রদেশ বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্য বলেন, দুর্গা পূজার প্রাক মুহুর্তে বিরোধীদের মন্তব্যে রাজ্যে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট উস্কানিমূলক।। দুঃখের বিষয়, বিগত কিছুদিন যাবত কংগ্রেস ও সিপিএম বিজেপি সরকারের উপর মিথ্যে অভিযোগ করছে। বিরোধী দল সরকারের বিরোধিতা করবে তা স্বাভাবিক, কিন্তু কংগ্রেস ও সিপিএম বিজেপি সরকারের উপর মিথ্যে আরোপ লাগাচ্ছে তা কোনো ভাবেই বাঞ্ছনীয় নয় এবং তা মেনে নেওয়া যায় না । তাই প্রতিবাদ সরূপ এদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা। তিনি আরো বলেন, সিপিএম ১০৩২৩ শিক্ষকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। নিয়োগ নীতি না মেনে তাদের চাকুরী প্রদান করা হয়েছিল। ওই সময়ে কংগ্রেস এই অন্যায় নিয়োগ-নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। বর্তমান সময়ে বিজেপি নিয়োগ নীতি মেনে যুবক যুবতীদের চাকুরী প্রদান করেছে। তাদের চাকরির গ্যারান্টি রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় কখনোই তাদের চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।এদিন তিনি আরো বলেন, বিরোধীদের অভিযোগ রাজ্যে খাদ্যের অভাব রয়েছে। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যবাসীর জন্য বিনামূল্যে চাল প্রদান করছে সেটাই সহ্য হচ্ছে না বিরোধী সিপিএমের। রাজ্যের কোন মানুষ না খেয়ে থাকবেনা কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়টি নিশ্চিন্ত করেছে। বর্তমান সময়ে নারী গঠিত অপরাধে পুলিশকে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে যাতে দলীয় রাজনৈতিক রঙ বিচারক না করা হয় তারও নির্দেশ রয়েছে। যার কারণে, নারী সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে ডাক্তারের সংখ্যা বেড়েছে এবং বিচারে সাজার হারও বেড়েছে।এদিন মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, ত্রিপুরায় খুন সন্ত্রাসের রাজনীতি আমদানি করেছিল সিপিএম। পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস সেই ধারায় চলেছে। এদিন তিনি বাম জামানায় খুনের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে প্রকাশ্য দিবালোকের শুকরাম দেববর্মাকে খুন করা হয়েছিল। তেমনি, তাদের আমলে বিধায়ক পরিমল সাহা, সিপিএমের বিধায়ক গৌতম দত্ত, মন্ত্রী বিমল সিনহা সহ বহু মানুষ খুন হয়েছিল। সেই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার আজও সম্পন্ন হয়নি। আজ তারাই আওয়াজ তুলেছে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।তারা কিভাবে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা নেই বলে দাবি করছে সেটাই আশ্চর্যজনক বলে দাবি করলেন মন্ত্রী রতন লাল নাথ।
৪ অক্টোবর ২০২৪