নিজস্ব প্রতিনিধি,
অম্বুবাচী
শব্দটার সঙ্গে হিন্দুরা ছোট থেকেই পরিচিত। এই সময়টাকে হিন্দুধর্মে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বলে মানা হয়। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। জড়িয়ে রয়েছে
ধর্মীয় উপাচারও। এবছরের
২২শে জুন। বাংলা ৭ই আষাঢ়। এদিন দুপুর থেকে শুরু হয় হিন্দু ধর্মের এক বিশেষ বার্ষিক
উৎসব— অম্বুবাচী। একে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ভুল হবে। এর পিছনে আছে
প্রাচীন কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি, নারীর ঋতুচক্রের সঙ্গে ধরিত্রী মাতার মিল এবং গা
ছমছমে পৌরাণিক কাহিনী।সংস্কৃত শব্দ 'অম্বুবাচী' অর্থাৎ 'জলবতী', অর্থাৎ যার দেহে
সিক্ততা এসেছে। হিন্দু শাস্ত্রে পৃথিবীকে মা রূপে কল্পনা করা হয়, এই তিনদিন
ধরিত্রী মায়ের ঋতুকাল বলে গণ্য করা হয়। যেমন নারীরা রজঃস্বলা অবস্থায় নির্দিষ্ট
কিছু আচার পালন করেন , ঠিক তেমনই এই সময় পৃথিবীকেও ‘অশুচি’ বলে মানা হয়।অসমের
গুয়াহাটি শহরের কামাখ্যা মন্দির হল অম্বুবাচী উৎসবের মূল কেন্দ্র। পৌরাণিক কাহিনী
অনুযায়ী সতীর যোনি এখানে পতিত হয়েছিল, তাই এখানে দেবী ‘শক্তি’ রূপে পূজা পান। এই
তিন দিন কামাখ্যা মন্দিরের দরজা বন্ধ রাখা হয়।এই সময়ে—মন্দিরে ঢোকা নিষিদ্ধ, কোনও
মাঙ্গলিক কাজ হয় না, রান্না করা নিষেধ, আগেই খাবার তৈরি করে রাখতে হয়, সাধু,
সন্ন্যাসী, বিধবা নারীরা নিরামিষ আহার গ্রহণ করেন, চাষাবাদ বন্ধ থাকে ও জমিকে
বিশ্রাম দেওয়া হয়। এই রীতির পিছনে কৃষিজ কারণও রয়েছে। বর্ষার সূচনায় যখন মাটি ভিজে ওঠে, তখন তাকে উর্বরতা ফেরানোর
সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এই সময়ে কোনও রকম মাটির কাজ বা বীজ বপন করা হয়
না। মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে তিনদিন ধরে একপ্রকার
লাল তরল বের হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন সেটি দেবীর রজঃস্রাব। এই তরলে ভেজানো কাপড়
ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয় যাকে বলা হয় রক্তবস্ত্র। ভক্তরা এটি গলায় বা হাতে
ধারণ করে মনে করেন এটি মনোকামনা পূর্ণ করবে।এই বিশেষ উৎসব কেবলমাত্র একটি ধর্মীয়
রীতি নয়, এটি নারীর সম্মান, প্রকৃতির উর্বরতা ও কৃষি চক্রের প্রতি শ্রদ্ধা
নিবেদনের একটি সামাজিক বার্তা মাত্র।
Akb tv news
22.06.2025