নিজস্ব প্রতিনিধি,
আজও আকর্ষণ আগরতলার দুর্গাবাড়ির মন্দিরের পুজো । বলা হয়ে থাকে যে আগরতলার দুর্গাবাড়ি মন্দিরের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ত্রিপুরার রাজবংশের ৫০০ বছরের ইতিহাস।আগরতলা সহ ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকাতেও এখন জায়গা করে নিয়েছে বিগ বাজেটের পুজো। কিন্তু সেই সমস্ত পুজোর মধ্যেও এখনও রাজ্যে এই দুর্গা বাড়ির পূজার আকর্ষণ একটুও কমেনি । দুর্গাবাড়ি মন্দিরের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ত্রিপুরার রাজবংশের ইতিহাস। জানা যায় ১৮৩০ সালে মহারাজা ঈশান চন্দ্র মানিক্যের শাসন কাল থেকে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর বংশধর বিপীনবিহারী প্রভু গোস্বামী শুরু করেন দুর্গা পূজা। ত্রিপুরার রাজাদের কূলগুরু বিপিন বিহারী প্রভু গোস্বামী। এক সময়ে এই পুজোর আয়োজন করত ত্রিপুরার রাজবংশ। ক্রমে সেই পুজোর আয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ত্রিপুরার রাজ্য সরকার। আর, এই পুজোর মহিমা এবং আকর্ষণ এমনই যে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে তো বটেই বাইরে থেকেও অনেকেই এসে সামিল হন তাতে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জয়ন্ত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, রাজাদের আমলে শুরু হওয়া এই পুজোর বয়স ৫০০ বছর পার হয়ে গিয়েছে। তিনি জানান, মহাষষ্ঠীর দিনেই বোধনের মাধ্যমে সেখানে নিয়ে আসা হয় দুর্গা প্রতিমা। 'ত্রিপুরার রাজ পরিবারের রাজধানী তিন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এই সঙ্গেই স্থানান্তরিত হয়েছে রাজ মন্দিরও। আগরতলায় ১৮৩৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় দুর্গাবাড়ি মন্দির। এর প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজা কৃষ্ণ কিশোর মাণিক্য। তার আগে তা ছিল উদয়পুর, অমরপুর এবং পুরাতন হাভেলিতে।' বলা হয়ে থাকে যে আগে রাজ আমলে যে নিয়ম ছিল এখন তাতে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। তবে তাতে এর আকর্ষণ এবং গরিমা এতটুকুও কমেনি। এখনও এই দুর্গাপূজা শুরুর আগে রাজ পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির কাছে একটি রিপোর্ট পাঠান জেলাশাসক।পুজো শেষ হওয়ার পরেও একইভাবে আরেকটি লিখিত রিপোর্ট দেওয়া হয়। শুধুমাত্র তাই নয়, এই মন্দিরের পুরোহিতকে রাজ্য সরকার প্রতি মাসে একটি সাম্মানিক বা মাসোহারাও দেয়। দশমীর দিনে, বিসর্জনের সময়ে করা হয় বিশেষ আয়োজন। তবে এই দুর্গা বাড়ির পুজার একটি বিশেষত্ব হল এখানে দৃশ্যত দুই হাত বিশিষ্ট দেবী দুর্গার পুজা হয়। এ প্রসঙ্গে ইতিহাস গবেষক পান্নালাল রায় বলেন, আরতির সময় দশ হাত বিশিষ্ট দুর্গা প্রতিমা দেখে ভীত হয়ে পড়েন এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন মহারাণী সুলোক্ষ্ণো দেবী, মহারাজ কৃষ্ণ কিশোর মাণিক্যের স্ত্রী, যার রাজধানী ছিল রাঙ্গামাটিতে, বর্তমানে উদয়পুরে। যদিও দেবী দুর্গাকে সাধারণত তাঁর 'দশভুজা' (দশ হাত বিশিষ্ট) রূপে দেখা যায়, আগরতলার দুর্গাবাড়ির মূর্তিটিতে কেবল দুটি দৃশ্যমান হাত রয়েছে এবং বাকি হাত পিছনে লুকিয়ে রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দুর্গার অনন্য রূপটি একটি ঐশ্বরিক আদেশের ফলেই তৈরি হয়েছিল। মঙ্গলবার মহস্টমি তিথিতেও দুর্গা বাড়িতে মায়ের পুজা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন মায়ের কাছে অঞ্জলি প্রদান করার জন্য উৎসুক দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এ প্রসঙ্গে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জয়ন্ত ভট্টাচার্য সংবাদ মাধ্যমে পুজার বিষয়ে অবগত করেন।
akb tv news
30.09.2025