কথায় আছে "চায়ের কাপে তুফান"। এক কাপ চা সকাল-সন্ধ্যায় আপনার মনকে চাঙ্গা করে তুলবেই। শরীর হবে সতেজ।
সেই ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে ভারতীয়দের চা খাওয়ার অভ্যেস। সেই হিসেবে আমরা ত্রিপুরাবাসী চা উৎপাদনে আমাদের কৃতিত্বের কথা গর্ব করেই বলতে পারি। তবে একথা ঠিক যে রাজ্যের উৎপাদিত চা সঠিক মূল্য পাচ্ছেনা। আমাদের রাজ্যে ৫৮টি চা বাগান আছে।
এই চা শিল্পের সঙ্গে রাজ্যের ও বহিঃরাজ্যের প্রায় ১৩ হাজার শ্রমিক জড়িত রয়েছেন। ত্রিপুরায় রাজ্য সরকার পরিচালিত ৩টি, সমবায়ের মাধ্যমে ১৩টি ও ব্যক্তিগত মালিকানায় ৪২টি চা বাগান রয়েছে।
কিন্তু কোনও বাগানই লাভের মুখ দেখছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। এর খোঁজখবর নিতে যাই রাজধানী আগরতলা থেকে খানিকটা দূরে গান্ধীগ্রাম সংলগ্ন দুর্গাবাড়ি চা বাগানে। সবুজের সমারোহে চা বাগানের মনোরম দৃশ্য মনকে আকৃষ্ট করবেই।
সোনালী রোদ আর কালো মেঘের আনাগোনায় হাল্কা বৃষ্টি পড়ন্ত বেলায় চা বাগানে যেন ভূস্বর্গের সৌন্দর্যকে তুলে এনেছিলো।
ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাই চা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের ভিতর।
বাগান থেকে শ্রমিকরা কচিপাতা তুলে আনার পর তা ব্যাগে ঢালেন। তারপর তা রাখা হয় বড় বড় রিজার্ভারে।
সেখানে হাইস্পিডের ফ্যানের মাধ্যমে পাতাগুলি কিছুটা শুষ্ক করা হয়। তারপর সেই পাতা পরিমাণ মতো দেওয়া হয় মেশিনে। যেখানে মিহি হয়ে বের হয় পাতা।
শ্রমিকরা সেই মিহিপাতা নিয়ে যান আর একটি কক্ষে।
সেখানে তা মেঝেতে ঢেলে কিছুটা শুষ্ক করা হয়।
তারপরা সেই মিহিপাতা দেওয়া হয় উচ্চ তাপমাত্রার বৈদ্যুতিক চুল্লীতে। আর সেখানে গিয়েই পাওয়া যায় রসনা তৃপ্তির চা পাতার সেই সৌরভ।
বৈদ্যুতিক চুল্লী থেকে চা পাতা আরও একটি মেশিনের সাহায্যে চলে যাচ্ছে অন্য একটি কেবিনে।
তারপর সেই চা পাতা সংগ্রহ করা হয় দুর্গাবাড়ি চা বাগানের ব্যাগে।
সেখানে কর্মরত এক শ্রমিক জানান এখন দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কেজি চা পাতা উৎপাদন করা হচ্ছে। যা আগের তুলনায় খুবই কম। এবছর পোকার আক্রমণে চা পাতার ফলন ভালো হয়নি বলে জানান ঐ শ্রমিক। প্রায় ১৫ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। রয়েছেন অন্যান্য কর্মচারীরাও। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজে ব্যস্ত। এই বাগান থেকে অবশ্য চা পাতা বিক্রির কোন ব্যবস্থা নেই। তবে এক শ্রমিক জানালেন, বাগানের পাশেই কয়েকটি বাড়িতে চা পাতা বিক্রি হয়। সেই অনুযায়ী চা পাতা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র থেকে কিছুটা এগোতেই দেখা যায় কয়েকটি বাড়িতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ব্যবসা চলছে।
এক কেজি, পাঁচশো গ্রাম, আড়াইশো গ্রাম, একশো গ্রামের প্যাকেট রয়েছে তাদের কাছে। স্বীকার করলেন বাগান থেকে খোলা চা পাতা এনে তারাই প্যাকেট করেন। আড়াইশো গ্রামের একটি প্যাকেট বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। যদিও প্যাকেটের গায়ে লেখা রয়েছে ৫৫ টাকা। ফেরার পথে দুর্গাবাড়ি চা বাগানের সাক্ষীস্বরূপ নিয়ে আসি আড়াইশো গ্রামের একটি প্যাকেট।
বর্তমান রাজ্য সরকার চা শিল্পকে এক নতুন রূপে প্রতিস্থাপন করতে চাইছে। এই লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে বহিঃরাজ্যের একটি স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিষয়ে গবেষণা করা হবে। এখন দেখার রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হয়।
প্রতিবেদকঃ তন্ময় বনিক, সহ-সম্পাদক ( ত্রিপুরা বিভাগ)
আরশি কথা
ছবিঃ নিজস্ব ও সংগৃহীত
১৫ই জুলাই ২০১৮ইং
সেই ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে ভারতীয়দের চা খাওয়ার অভ্যেস। সেই হিসেবে আমরা ত্রিপুরাবাসী চা উৎপাদনে আমাদের কৃতিত্বের কথা গর্ব করেই বলতে পারি। তবে একথা ঠিক যে রাজ্যের উৎপাদিত চা সঠিক মূল্য পাচ্ছেনা। আমাদের রাজ্যে ৫৮টি চা বাগান আছে।
এই চা শিল্পের সঙ্গে রাজ্যের ও বহিঃরাজ্যের প্রায় ১৩ হাজার শ্রমিক জড়িত রয়েছেন। ত্রিপুরায় রাজ্য সরকার পরিচালিত ৩টি, সমবায়ের মাধ্যমে ১৩টি ও ব্যক্তিগত মালিকানায় ৪২টি চা বাগান রয়েছে।
কিন্তু কোনও বাগানই লাভের মুখ দেখছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। এর খোঁজখবর নিতে যাই রাজধানী আগরতলা থেকে খানিকটা দূরে গান্ধীগ্রাম সংলগ্ন দুর্গাবাড়ি চা বাগানে। সবুজের সমারোহে চা বাগানের মনোরম দৃশ্য মনকে আকৃষ্ট করবেই।
সোনালী রোদ আর কালো মেঘের আনাগোনায় হাল্কা বৃষ্টি পড়ন্ত বেলায় চা বাগানে যেন ভূস্বর্গের সৌন্দর্যকে তুলে এনেছিলো।
ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাই চা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের ভিতর।
বাগান থেকে শ্রমিকরা কচিপাতা তুলে আনার পর তা ব্যাগে ঢালেন। তারপর তা রাখা হয় বড় বড় রিজার্ভারে।
সেখানে হাইস্পিডের ফ্যানের মাধ্যমে পাতাগুলি কিছুটা শুষ্ক করা হয়। তারপর সেই পাতা পরিমাণ মতো দেওয়া হয় মেশিনে। যেখানে মিহি হয়ে বের হয় পাতা।
সেখানে তা মেঝেতে ঢেলে কিছুটা শুষ্ক করা হয়।
তারপরা সেই মিহিপাতা দেওয়া হয় উচ্চ তাপমাত্রার বৈদ্যুতিক চুল্লীতে। আর সেখানে গিয়েই পাওয়া যায় রসনা তৃপ্তির চা পাতার সেই সৌরভ।
বৈদ্যুতিক চুল্লী থেকে চা পাতা আরও একটি মেশিনের সাহায্যে চলে যাচ্ছে অন্য একটি কেবিনে।
তারপর সেই চা পাতা সংগ্রহ করা হয় দুর্গাবাড়ি চা বাগানের ব্যাগে।
সেখানে কর্মরত এক শ্রমিক জানান এখন দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কেজি চা পাতা উৎপাদন করা হচ্ছে। যা আগের তুলনায় খুবই কম। এবছর পোকার আক্রমণে চা পাতার ফলন ভালো হয়নি বলে জানান ঐ শ্রমিক। প্রায় ১৫ জন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। রয়েছেন অন্যান্য কর্মচারীরাও। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজে ব্যস্ত। এই বাগান থেকে অবশ্য চা পাতা বিক্রির কোন ব্যবস্থা নেই। তবে এক শ্রমিক জানালেন, বাগানের পাশেই কয়েকটি বাড়িতে চা পাতা বিক্রি হয়। সেই অনুযায়ী চা পাতা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র থেকে কিছুটা এগোতেই দেখা যায় কয়েকটি বাড়িতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ব্যবসা চলছে।
এক কেজি, পাঁচশো গ্রাম, আড়াইশো গ্রাম, একশো গ্রামের প্যাকেট রয়েছে তাদের কাছে। স্বীকার করলেন বাগান থেকে খোলা চা পাতা এনে তারাই প্যাকেট করেন। আড়াইশো গ্রামের একটি প্যাকেট বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। যদিও প্যাকেটের গায়ে লেখা রয়েছে ৫৫ টাকা। ফেরার পথে দুর্গাবাড়ি চা বাগানের সাক্ষীস্বরূপ নিয়ে আসি আড়াইশো গ্রামের একটি প্যাকেট।
প্রতিবেদকঃ তন্ময় বনিক, সহ-সম্পাদক ( ত্রিপুরা বিভাগ)
আরশি কথা
ছবিঃ নিজস্ব ও সংগৃহীত
১৫ই জুলাই ২০১৮ইং