।। 'নির্জনতা' ।। কবিতা ।। রীতা আক্তার ।। বাংলাদেশ

আরশি কথা

।। নির্জনতা ।।
 


এ কেমন নির্জনতা ভর করিয়াছে শ্রাবণ দিনে। 
তুমি নাই বলিয়া পশ্চিমের গোধূলি লাল আবির মাখিয়াছে ললাটে। 
সলতে পুড়াইয়া প্রদীপ হইয়াছে মৃয়মান।
আমি আধ খোলা জানালার কার্ণিশে দাঁড়াইয়া 
দু' ফোঁটা অশ্রু ফেলিয়া 
চাহিয়া থাকি অনন্ত পথের দিকে।

রিকশার টুংটাং শব্দ আমার কান ভেদ করিয়া 
বুকের অলিগলিতে কম্পন সৃষ্টি করে।
বড্ড মনে পড়িতেছে তোমায়। 
আমাকে একলা ফেলিয়া 
কেমন করিয়া গেলে? 
একবারও মুখ ফুটিয়া বলিলেনা তনু যাইবে আমার সাথে?
পলাশপুরের স্টেশনে ট্রেন কি থামিয়াছে? 
তুমি কি উঠিয়াছো ট্রেনে? 
এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশন পার হইয়া ট্রেন ছুটিয়া যাইতেছে পলাশপুরের দিকে। 
শূণ্য  প্ল্যাটফর্মের মতো আমার মনখানাও
হু হু করিয়া উঠিতেছে। 
তুমি ফিরিবেনা জানিয়াও আমি দাঁড়াইয়া রই 
জানালার কার্ণিশ ঘেঁষিয়া। 
 অশ্রু ঝরিয়া কপোলদ্বয় ভিজিতেছে।  মুছিবার কেহ নাই।
অভিমানী মেঘ কান্না জুড়িয়া দিয়াছে
শিতল বাতাস ভেদ করিয়া বৃষ্টির ঝাপটা 
আসিয়া পড়িল আমার মুখে।
এলো চুল হইলো আধ ভেজা। 
শ্রাবণের এই পঞ্চম রাত্রিতে আমি ভিজিতেছি,
ভিজিতেছে পিচঢালা পথ। 

খুব দূরে টং দোকানে ক্ষিণ আলো জ্বলিতেছে নিভিতেছে।
লেজ নাড়াইয়া ছুটিয়া আসিল কালো রঙের কুকুর।
ঘেউ ঘেউ আওয়াজে সেও বুঝি আমার নির্জনতার সঙ্গি হইতে চায়। 

আমি ভেজা শরীরে একপায়ে দাঁড়ানো ল্যাম্পপোস্টের দিকে তাকাইয়া রই। 
তোমার ট্রেনখানা বোধহয় গোটা চারেক স্টেশন পার হইয়াছে। 
তুমি কি চলতি ট্রেনের জানালায় মুখ গুজিয়া আমার কথা ভাবিতেছো? 
নাকি ধোঁয়া উঠা গরম কাপে ঠোঁট ভিজাইয়া 
কবিতার বই উল্টাইতেছো? 
তুমি কবে ফিরিবে বলিলেনা, 
শুধু বলিলে - তনু অপেক্ষা করিও, আমি ফিরিবো।

তোমার জন্য লাল পেড়ে একখানা শাড়ি আনিবো,
কাজল আর লাল টিপ। 
তুমি ফিরিবে বলিয়াই আমি অপেক্ষমান।
তোমার না থাকাতেই, 
পথের পাশের কুকুর,টং দোকানের মৃয়মান প্রদীপ,
ধূসর ল্যাম্পপোস্ট, ভেজা রিকশা নির্জনতার সঙ্গি হইয়াছে আমার।


- রীতা আক্তার, বাংলাদেশ
৩রা সেপ্টেম্বর, ২০২২
3/related/default