Type Here to Get Search Results !

ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ভাগ করে নেব কিছু অনুভূতি"...শান্তা দেবনাথ

ছোটবেলায় ক্যালেন্ডার খুব ভালোবাসতাম।ছোট্ট একটা স্বপ্নের গ্রাম,ঢেউ খেলানো জলে হাস ভেসে যাচ্ছে,যেন ঢেউ গুলো গুনতে পারা যায,আরো কত কি।কারন ছোটবেলাটাই এরকম ছিল।মধুপুরে কাটে ছোট বেলাটা।দূর্গা পূজো,নাটক যাত্রা, ভিডিও দেখা বেদের মেয়ে জোছনা ।এগুলো বললে দুতিন লাইনে শেষ হবে না।খুব কম সময় কিন্তু গল্পে ও নয় উপন্যাস হবে।কারন অনুভূতিটা যে নিজের।ক্লাস থ্রি তখন বাবার বদলি সূত্রে তুলসীবতী তে চলে আসি ।কিন্তু ঐ সময় আর আসেনি।মনে ও করতে চাই না।কারন ঐটা আমার জীবন নয়।আজ ক্যালেন্ডারে তাকাতেই ইচ্ছে হয় না। ক্লাস থ্রি থেকে প্রতিদিন গাড়ী ঝুলে স্কুলে যাওযা বাস্তবতা সংগ্রাম শুরু।ক্লান্ত হইনি,সেটাই যে জীবন।
আর যখন ছবি আঁকা শুরু করি তখন পেন্টিং আর ক্যালেন্ডার এর মধ্যে তফাত টা শিখি শিল্পগুরুর কাছ থেকে।আর যখন ক্যানভাস এ আকি তখন আমার শিল্পগুরু আমাকে কম্পোজিশন, স্পেস ডিভিশন এগুলো শিখিয়েছেন। কোথায় একটা ছবিতে ছাড়তে হয় কোথায় ধরতে হয় ইত্যাদি ।সেন্টার অফ ইন্টারেস্ট কোথায় তৈরী করতে হয় ।বাস্তব জীবন তো শিল্প থেকে দূরে কিছু নয় ।কারন শিল্পীরা ত্যাগী বললেও ভূল হবে যতক্ষণ ক্যানভাস নিজের থাকে তখন তাকে কাউকে ধরতেও দিই না।যখন গ্যালারিতে যায় তখন আবার আলাদা।অর্থাত স্টুডিও ও গ্যালারির মধ্যে যে তফাত। গভীরতায দেখলে অনেকটা বাস্তব জীবন।
রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর শেষ জীবনে ছবি আকা শুরু করেন।তার আগে তিনি তাঁর লেখায় কম্পোজিশন, স্পেস ডিভিশন এগুলো নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিয়েছেন ।আমরা উনার লেখার কাটাকুটি ফর্ম গুলো দেখি।তার থেকে কিভাবে ছবির জন্ম দেন।পৃথিবীর অনেক দেশে ঘুরেন এবং আজকে যাদের ইতিহাসে আমরা পাই এই শিল্পীদের অনেকের সাথেই সাক্ষাত হয।তার নিজের দেশের শিল্প কলা দেখে তিনি হয়তো ভেবেছিলেন আমাদের শিল্প শৈলী কোথাও একটু আটকে গেছে ।তখন তিনিই প্রথম ছবিকে একটু অন্য ভাবে ভাবেন।তাইতো তিনি ভারতের আধুনিক চিত্র কলার জনক।এবং সুখ, দুঃখ,আঘাতে তিনি কিভাবে সৃষ্টি করেন তাঁর বলিষ্ঠতা দেখলেই বোঝা যায় ।
মাটি ভিষন ঠান্ডা আমরা সবাই জানি।তাকে পিটিয়ে মেরে আঘাত করে আদর করে তবেই শিল্প তৈরি হয। তারপর তাকে পোড়াতে হয।তবেই হাজার বছরের জন্য শিল্প হয় ।তাই জীবনে চলতে গিয়ে আঘাতের সম্মুখীন হলেই বুঝব আমার পথ চলা সঠিক হচ্ছে । এটা মনিষীদের কথা।তবে সেই পথটা নিজের হতে হয় । আঘাতের কোন কাল সময় হয় না।আমার ঠাকুমা,মা সবাই আঘাত পেযেছেন। কখনো তারা শিল্প দিয়ে এর বহিঃপ্রকাশ করেছেন সূতো দিয়ে কবিতা লিখে।যেটাকে আমরা নক্সী কাঁথা বলি।কারন এটাতে তারা দক্ষ ছিলেন। এটা তাদের দুঃখের ফল, ফ্রাসটেশানের নয। এটা ছিল তাদের মনের কথা,লোক দেখানো নয় ।যেটাকে যত্ন করে সংরক্ষণ করছেন শিল্পী কিংবা শিল্পবোদ্ধারা।কারন তাদের দর্শনটা পরিস্কার।যেটা মন থেকে হয় সেটা আলাদাই হয় ।
আজকের প্রজন্ম বাস্তবতাকে আরো কাছ থেকে দেখে। তাই প্রজন্মকে বলব,জীবনে কখনো কখনো এমন আসে যে মানুষকে কখনো জানি না, চিনি না তার কাছ থেকেই আঘাত মিলেছে।তাতে ক্ষতি নেই তাকে পারলে একটা শিল্প উপহার দেবো।তারপরেও যদি আঘাত করে তার বিনিময়ে হয়তো আঘাত ই হয।তাই বেশী করে আঘাত পেলেও তা সহ্য করতে হবে, সেদ্ধ হতে হবে, নিজেকে পোড়াতে হবে ,বারবার ঠকতে হবে তাতে কি একদিনতো আসবে ঈশ্বর আমাকে ও জেতাবে।সেই দিনটার অপেক্ষা করে নিজের দক্ষতাটাকেই বলিষ্ঠ করি আমরা ।কারন আমরা যে ভোগী,ত্যাগী মহাপুরুষ তো নই,কারন আমাকে যে ঘরেই ফিরতে হয় প্রতিদিন,যেহেতু ঘরটা বেঁধেছি।

ছবিঃ নিজস্ব

শান্তা দেবনাথ, পরিচালিকা
গ্যালারী আর্ট পিস,ত্রিপুরা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.