আজ সকালে বড়মুড়া আসার সময়, বিশীর্ণা হাওড়া নদীকে দেখে মনটা বিষন্ন হয়ে উঠলো।ধাবমান বাস থেকে বৃষ্টিবিধৌত প্রায় শুস্ক হাওড়া নদীকে দেখে তৃষ্ণা জেগে উঠলো। ভাবছিলাম পাহাড়ের কোলে কোলে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন জনজাতি মহল্লার আম জনতার কথা। সেখানে এখন পানীয় জলের হাহাকার। ট্যাংকারে করে জনপদ গুলিতে সরকারী উদ্যোগে জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সে তো শুধু পেয় জল। পান করা ছাড়াও বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করতে জল লাগে। এই রকম জলের অভাব নিয়ে জানিনা এই জনজাতি মানুষেরা কেমন করে বেঁচে থাকে!
অথচ পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিলো না। তিন দশক ধরে নির্বিচারে বন ধ্বংস করার কারনে, ছোটো বড় যে সমস্ত ছড়া বা ট্রিবিউটারী গুলো হাওড়া নদীকে জলে ভরিয়ে তুলতো তারাও শুকিয়ে গেছে। অভাবী মানুষ গুলির অভাবের সুযোগ নিয়ে একদল বনদস্যু নেংটো করে ফেলেছে আমাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বনধ্বংসের কারনে বন্যপ্রাণী ও প্রায় বিলুপ্তির পথে। জীব বৈচিত্র্য এখন রূপকথার গল্প। কত ওষধি গাছ গাছড়া বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করার জন্য রাজ্য সরকারের বন দপ্তর অবশ্য রয়েছে। কিন্তু সেখানে আগাপাশতলা দূর্নীতি। ফলে আমাদের চোখের সামনে থেকে উবে যাচ্ছে হাওড়া নদী। সেই ছোটোবেলা থেকে নদীমাতৃক দেশের লোক বলে নদী নিয়ে আমাদের কত অহংকার! আমার ঠাম্মা গাইতেন কর্তার গান।কে যাস রে ভাটী গাঙ বাইয়া,আমার ভাইধন রে কইও নাইয়র নিতো আইয়া। যৌবনে সে নদী শুনিয়েছে,ও নদীরে ও ভাগীরথী রে, তোমারে এপারে সুখ ওপারে সুখ, মধ্যে সুখের চর, তারি মাঝে বান্ধি আমি ভালোবাসার ঘর! তখন জীবনে ছিলো ভালোবাসার তৃষ্ণা! ফলে এই গান হৃদয়ে আমার তুলতো স্পন্দন। ছোটোবেলার ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে,বলো কোথায় তোমার দেশ? তোমার নেই কি চলার শেষ!
এভাবেই জীবনের প্রতিটি পর্বে কোনও না কোনও নদী আমাদের সাথে সাথে বইতে থাকে। তারপর কখন যে সেই নদী আমাদের বুকের ভিতরে জায়গা করে নেয়, তা আমরা নিজেরাই জানিনা। দুর্গাপুরে থাকার স ম য় দামোদর ছিলো সেই নদ! চলনে তার পৌরুষ! ১৯৭৮ সালের বন্যার সময় দেখেছি তার ভয়াবহ রূপ। তারপর ব্যারাজের অনুশাসনে বন্দী, তিরতির করে বয়ে যাওয়া বরাকর, কংসাবতী, সুবর্ণরেখাকেও দেখেছি। ১৯৭৯ সালে পুরী যাওয়ার পথে দেখলাম মহানদী। কাটোয়া থেকে নবদ্বীপ যাওয়ার সময় উত্তাল গঙ্গার ভয়াল রূপ দেখেছি। ত্রিপুরার গোমতী, ফেনী,মনু, ধলাই, খোয়াই নদী দেখেছি। গুয়াহাটি গিয়ে বিশাল গর্জমান ব্রহ্মপুত্র নদকে দেখেছি। ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওড়া নদীর বৃষ্টির জলে ফেঁপে ওঠা দেখেছি। ভরা বর্ষায় গুম গুম করে সমুদ্রের দিকে নদীকে ছুটে যেতে দেখেছি। কিন্তু এক হৃতযৌবনা নদীকে দেখে একবুক দুঃখ নিয়ে কানে বাজতে লাগলো ভুপেন হাজারিকার অমর গান।
"একটু গেলে অথৈ সাগর পা বাড়ালেই নদী
বুকের মাঝে কুলুকুলু গঙ্গা ভাদীরথী! "
বুকের মাঝে অন্তঃসলিলা সেই নদীটাই, সেই ভালোবাসাটাই আমাদের জীবন থেকে মুছে যাচ্ছে! কি ভাই! একেবারে মুছে গেলে, পারবে তো থাকতে? বুকে হাত দিয়ে সত্যিটা একবার বলতে পারবে তো!
শুভঙ্কর চক্রবর্তী, প্রযুক্তিবিদ
ত্রিপুরা
২৯শে মার্চ ২০১৯ইং
অথচ পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিলো না। তিন দশক ধরে নির্বিচারে বন ধ্বংস করার কারনে, ছোটো বড় যে সমস্ত ছড়া বা ট্রিবিউটারী গুলো হাওড়া নদীকে জলে ভরিয়ে তুলতো তারাও শুকিয়ে গেছে। অভাবী মানুষ গুলির অভাবের সুযোগ নিয়ে একদল বনদস্যু নেংটো করে ফেলেছে আমাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বনধ্বংসের কারনে বন্যপ্রাণী ও প্রায় বিলুপ্তির পথে। জীব বৈচিত্র্য এখন রূপকথার গল্প। কত ওষধি গাছ গাছড়া বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করার জন্য রাজ্য সরকারের বন দপ্তর অবশ্য রয়েছে। কিন্তু সেখানে আগাপাশতলা দূর্নীতি। ফলে আমাদের চোখের সামনে থেকে উবে যাচ্ছে হাওড়া নদী। সেই ছোটোবেলা থেকে নদীমাতৃক দেশের লোক বলে নদী নিয়ে আমাদের কত অহংকার! আমার ঠাম্মা গাইতেন কর্তার গান।কে যাস রে ভাটী গাঙ বাইয়া,আমার ভাইধন রে কইও নাইয়র নিতো আইয়া। যৌবনে সে নদী শুনিয়েছে,ও নদীরে ও ভাগীরথী রে, তোমারে এপারে সুখ ওপারে সুখ, মধ্যে সুখের চর, তারি মাঝে বান্ধি আমি ভালোবাসার ঘর! তখন জীবনে ছিলো ভালোবাসার তৃষ্ণা! ফলে এই গান হৃদয়ে আমার তুলতো স্পন্দন। ছোটোবেলার ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে,বলো কোথায় তোমার দেশ? তোমার নেই কি চলার শেষ!
এভাবেই জীবনের প্রতিটি পর্বে কোনও না কোনও নদী আমাদের সাথে সাথে বইতে থাকে। তারপর কখন যে সেই নদী আমাদের বুকের ভিতরে জায়গা করে নেয়, তা আমরা নিজেরাই জানিনা। দুর্গাপুরে থাকার স ম য় দামোদর ছিলো সেই নদ! চলনে তার পৌরুষ! ১৯৭৮ সালের বন্যার সময় দেখেছি তার ভয়াবহ রূপ। তারপর ব্যারাজের অনুশাসনে বন্দী, তিরতির করে বয়ে যাওয়া বরাকর, কংসাবতী, সুবর্ণরেখাকেও দেখেছি। ১৯৭৯ সালে পুরী যাওয়ার পথে দেখলাম মহানদী। কাটোয়া থেকে নবদ্বীপ যাওয়ার সময় উত্তাল গঙ্গার ভয়াল রূপ দেখেছি। ত্রিপুরার গোমতী, ফেনী,মনু, ধলাই, খোয়াই নদী দেখেছি। গুয়াহাটি গিয়ে বিশাল গর্জমান ব্রহ্মপুত্র নদকে দেখেছি। ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওড়া নদীর বৃষ্টির জলে ফেঁপে ওঠা দেখেছি। ভরা বর্ষায় গুম গুম করে সমুদ্রের দিকে নদীকে ছুটে যেতে দেখেছি। কিন্তু এক হৃতযৌবনা নদীকে দেখে একবুক দুঃখ নিয়ে কানে বাজতে লাগলো ভুপেন হাজারিকার অমর গান।
"একটু গেলে অথৈ সাগর পা বাড়ালেই নদী
বুকের মাঝে কুলুকুলু গঙ্গা ভাদীরথী! "
বুকের মাঝে অন্তঃসলিলা সেই নদীটাই, সেই ভালোবাসাটাই আমাদের জীবন থেকে মুছে যাচ্ছে! কি ভাই! একেবারে মুছে গেলে, পারবে তো থাকতে? বুকে হাত দিয়ে সত্যিটা একবার বলতে পারবে তো!
শুভঙ্কর চক্রবর্তী, প্রযুক্তিবিদ
ত্রিপুরা
২৯শে মার্চ ২০১৯ইং