Type Here to Get Search Results !

"একটি তর্জনী, একটি স্বাধীনতা" ঃ কোহেলি কুদ্দুস, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ

১৯৭১ সাল। এই বছরটি একটি ইতিহাস। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার ইতিহাস। এই ইতিহাস রচনা করেছেন যে কবি তার নাম "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান"। পাকিস্তানি শাসকেরা ২৪টি বছর বাঙালিদের পদতলে নিষ্পেষিত করেছিলো। সেখান থেকে আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। যিনি তাঁর তর্জনীর ইশারায় রুখে দিয়েছিলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও শাসক শ্রেণির ষড়যন্ত্র। '৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হবার পরেও পাকিস্তানি শাসকেরা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া নিয়ে তালবাহানা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু বুঝে গিয়েছিলো স্বাধীনতার আর কোন বিকল্প আমাদের সামনে নেই। তাই ১৯৭১ সালের ৭-ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার জনসমুদ্রের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। সেই ভাষণে মূলত মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও করনীয় সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু নির্দেশনা দেন। শুধু বাঙালিরা নয় সারা পৃথিবীর মানুষ অপেক্ষায় ছিলো বঙ্গবন্ধু কি নির্দেশনা দেন সেটা জানতে। মাত্র ১৯ মিনিট। ১৯ মিনিটের ভাষণে রাজনীতির কবি সেদিন পাকিস্তানের ২৪ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস, শোষণের ইতিহাস, অত্যাচারের ইতিহাস তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর সামনে। শুধু তাই নয় অসহযোগ আন্দোলন, প্রতিরোধ গড়ে তোলা, মুক্তিযুদ্ধের কৌশল ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে দেশকে স্বাধীন করতে হবে, তাও বলে যান তার সংক্ষিপ্ত কিন্তু ঐতিহাসিক সেই ভাষণে। কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়- "শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে, রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷ তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷" ঐতিহাসিক সেই ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তর্জনী বাঙালিদের কাছে ছিলো স্বাধীনতার স্পষ্ট নির্দেশনা। বঙ্গবন্ধু তর্জনী জনগণের কাছে ছিলো হাজার বছরের বঞ্চণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি ছিলো বাঙালির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। এই ভাষণটি বঙ্গবন্ধু শুধু একজন নেতা হিসাবে দেননি। তিনি দিয়েছিলেন বাঙালিদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসাবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিলো একটি জাতির মুক্তি দিশারী। তার তর্জনী সেদিন ছিলো এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। যা সেদিন কাঁপিয়ে দিয়েছিলো শোষকের আসন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভাষণটি শুনবে আর জানবে এই জাতির মুক্তি এনে দিয়েছিলো একজন মুকুটহীন রাজা। যার নির্দেশে এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলো। যিনি ক্ষমতা চান নি, চেয়েছিলেন এদেশের মানুষের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি। যিনি জেলখানার অন্ধকার কক্ষে থেকে চেয়েছিলেন হাজার বছর ধরে বঞ্চণার স্বীকার হওয়া একটি জাতির অধিকার ছিনিয়ে আনতে। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে পৃথিবীর বুকে নিজেদের জানান দেবে। তিনি পেরেছিলেন। তিনি এনে দিয়েছিলেন একটি দেশ-একটি পতাকা-একটি মানচিত্র। তাইতো আমরা শ্লোগান ধরি ' যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।' লেখক: কোহেলি কুদ্দুস সহ-সভাপতি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ


৭ই মার্চ ২০২২
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.