পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন করোনা ভাইরাস আক্রান্তকারীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে জাপানের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয়, কোথাও কিছু হয়নি ভাব দেখাচ্ছে। এবছরের শুরুতে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পরে জাপানের কানাগাওয়া প্রিফেকচারে। দিনটি ছিল ১৫ জানুয়ারী ২০২০। এরপর পারো ৫ জন ধরা পরে যারা চায়না সফর করে দেশে এসে স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছিল। কিন্তু ৬ নম্বর রোগী থেকে জাপানে এই ভাইরাস বিস্তার ঘটার মত ঘটনা ঘটে। প্রথম দিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার এতটা বিস্তার ঘটেনি বলে সরকারীভাবেও তেমন কোন ভূমিকা নেওয়া হয়নি। এরপর পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা ও সার্বিক ভয়াবহতার কথা মিডিয়াতে প্রচার হবার পরেও জাপানের কোথাও লকডাউনের কথা বলা হয়নি।
যতটা জানি, জাপান সরকারের কোন একক ক্ষমতা নেই যে চাইলেই কোন এলাকায় লকডাউন করতে পারে। তাই ধীরে চলার মত পদক্ষেপ নিয়ে করোনা ভাইরাস বিষয়টি অবজারবেশন করছিল সরকার। সরকারের এমন পদক্ষেপের কারণ মনে করা হয়, এবছর টোকিওতে অলিম্পিক হবার কথা ছিল। এই করোনা ভাইরাসের কারণে অলিম্পিক ব্যাঘাত ঘটবে মনে করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন। সারা পৃথিবীতে এই করোনা ভাইরাস মহামারী রূপ নেবার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় আগামী বছর পর্যন্ত অলিম্পিক স্থগিত রাখা হবে। এই ঘোষণার আগে জাপানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তেমন ছিল না। যেই না অলিম্পিকের তারিখ পিছানোর কথা ঘোষণা দেওয়া হলো এরপর হঠাৎ করেই যেন এর সংখ্যা বেড়ে যেতে শুরু করলো। এতে করে সাধারণ জনগন ধরেই নেয় এটি ইচ্ছে করে চাপিয়ে রাখা হয়েছিল।
জাপানের জনগন এমনিতেই বেশ সচেতন। নিজেরাই নিজেদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা যেন না থাকে সে কারণে সচেতন হতে থাকে। এরমধ্যেই সরকার বিভিন্ন প্রিফেকচারেরর স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে। পাশাপাশি বিভিন্ন খাবারের দোকান এবং কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়। ফলে অনেক লোকই ঘরে বসা। নিরুপায় হয়ে বলি আর সচেতনতার কারণেই বলি, জাপানে যে যাই করুন না কেন, এদের মাস শেষে বিল কিন্তু থেমে থাকবে না। তাই দুশ্চিন্তায় অস্থির জাপানি এবং জাপানে বসবাসকারী অনেক বিদেশী। এদরে বিষয় আমলে এনে সরকার
প্রধান বেশ কয়েকবার করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। অনেকেই এই প্রেস কনফারেন্সের আগে আশা করেছিলেন হয়তো লকডাইনের কথা ঘোষণা দিবেন। কিন্তু ভুল করেও তা করেন নি। উপরন্তু বলেছেন জাপানের কোথাও লকডাউনের মত পরিস্থিতি হয় নি।
মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জাপানের সর্বত্র সাকুরা ফুল ফোটে। এই ফুল দেখার জন্যই প্রতিবছর দেশের বাইরে থেকেও প্রচুর বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে যা এবার করোনা ভাইরাসের কারণে লক্ষণীয় ছিল না। তবে এটাও ঠিক স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই আবার এই আতংক উপেক্ষা করে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী এই সাকুরা ফুল দেখার পার্টি বা হানামি করে। এতে লোক সমাগম কিন্তু কম হয়নি। এতে ভাইরাস বিস্তারের যে সম্ভাবনা তা যেন তাদের মাথায়ই নেই। অন্যদিকে টোকিওতে লোকজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ততটা বোঝা যায় না যে তারা খুব চিন্তিত। এখানে সরকারের উদাসিনতা নাকী সাধারণ জনগনের খামখেয়ালী পনা। তা না হলে এই মরণ ব্যাধী ভাইরাসের কথা জেনেও কেন তা মেনে চলছে না তা বুঝতে পারছি না।
সরকার, মিডিয়া এবং সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করলে কোন বিষয়ই পরিষ্কার বলা যায় না যে জাপানের বর্তমান অবস্থা বা পরিস্থিতি যে কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। তবে প্রতিদিনই সংক্রামনের সংখ্যা বাড়ছে। কেবল টোকিওতেই এর মধ্যেই যে ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ধৈ ধৈ করে বাড়ছে এর পরিনতি কি হবে বোঝা যাচ্ছে না। আজকে এই লেখা যখন লিখছি তখন টোকিওতেই কেবল আজকে আক্রান্তর সংখ্যা ১৪৩ জন। আজকে পর্যন্ত মোট ১০০০ জনের উপর। পুরো জাপানে যার সংখ্যা ৩৭৪৩ জন। (জাহাজে ভ্রমণকারী যাত্রীর সংখ্যা ৭১২জন, যা আগের মোট সংখ্যার মধ্যে যুক্ত নেই)।
কিছুদিন আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী মিঃ শিনজো আবে ঘোষণা দিলেন প্রতি পরিবারের জন্য দুটি করে মাস্ক দেওয়া হবে। এর ফলে তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের মুখ রোচক কথা এবং কার্টুন চিত্র আঁকা। এর পরপরই আবার ঘোষণা এলো যাদের উপার্জন কম তাদের প্রতি পরিবারকে ৩০০,০০০ ইয়েন প্রনোদনা দেওয়া হবে। এটাতে মানুষ কিছুটা আস্বস্থ হলেও আবার কেউ কেউ বলছে এটা শুভংঘরের ফাঁকি। এখন দেখা যাক সরকার তার নাগরিকদের জন্য অর্থ সাহায্য দিয়েই নিরাপদ রাখার কথা ভাববেন নাকী লকডাউন দিয়ে তাদের নিরাপদ রাখবেন। সবটাই আগামীর আলোচনা সাপেক্ষ্যে।
তবে আর যাই হোক আমরা বিদেশীরা তুলনা মূলক চিন্তিত নানা কারণে। সামনে বেকার সংখ্যা বাড়বে। ভেঙ্গে যাবে অর্থনীতির কাঠামোও। এথেকে নিরসন যত দ্রুত করা সম্ভব ততই জাপানের জনগণ এই সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আসতে সুযোগ দিবে না হলে হয়তো বিদায় ঘন্টা বাজবে।
------------ পি.আর. প্ল্যাসিড
প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক
জাপান
৭ই এপ্রিল ২০২০
------------ পি.আর. প্ল্যাসিড
প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক
জাপান
৭ই এপ্রিল ২০২০