প্রয়াত ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘নন্টে-ফন্টে’র স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ। বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। রেখে গেলেন তাঁর ‘কাল্পনিক শক্তি’ হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট-দের। গত ২৪ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার জেরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রবীন লেখক-চিত্রশিল্পীকে। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। শনিবার রাত থেকেই ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। বর্ষীয়ান শিল্পীর চিকিৎসায় পাশে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। তাঁর চিকিৎসার জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল। তবে গতকাল থেকেই ৯৭ বছর বয়সী এই প্রবীণ কার্টুনিস্ট সাড়া দিচ্ছিলেন না চিকিৎসায়। চিকিৎসক সমরজিৎ নস্কর জানিয়েছিলেন সেই কথা। এর আগে বাইপ্যাপ সাপোর্টে ছিলেন শিল্পী, কিন্তু তাতেও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমছিল। কয়েক দিন আগে হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা। তাঁরা শিল্পীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে চিকিৎসকদের কাছে খোঁজ নেন। সেখানেই নারায়ণবাবুর হাতে পদ্মশ্রী স্মারক এবং মানপত্র তুলে দিয়েছিলেন তাঁরা। কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫ সালে হাওড়া শিবপুরে। গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে দেড় হাজারেরও বেশি সিরিয়াস ও মজার কমিকস সৃষ্টি করে বাংলার শিশু সাহিত্যে এক অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। জানিয়ে রাখা ভালো, এর মধ্যে অধিকাংশ কমিকসেরই কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং অবশ্যই আঁকা তাঁর নিজেরই। এমন নজির বিশ্বে বিরল। অনেকেই হয়তো জানেন না, কমিকস শিল্পী হিসেবে বহুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার বহু আগে থেকেই তিনি ছিলেন একজন নিখুঁত অলঙ্করণ শিল্পী। সমকালীন প্রায় সমস্ত দিকপাল সাহিত্যিকের লেখার অলংকরণ করেছিলেন তিনি। স্বপনকুমার হোক কিংবা ঠাকুমার ঝুলি, বিভিন্ন ধরনের বইয়ে তাঁর আঁকা প্রচ্ছদ দেশীয়-প্রকাশনার ক্ষেত্রে এক দুর্লভ সম্পদ বললে এতটুকুও অত্যুক্তি করা হয় না। নব্বই পেরিয়ে বয়স এবং অসুস্থতার কারণে, ছবি আঁকার সময়ে নারায়ণবাবুর হাত কিছুটা কাঁপত ঠিকই, তবু একটি দিনের জন্যেও কার্টুনের রেখায় ভুল হয়নি ‘বাঁটুল দি গ্রেট’, ‘হাঁদা ভোঁদা’, ‘নন্টে ফন্টে’-এর সৃষ্টিকর্তার।
আরশিকথা দেশ-বিদেশ
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১৮ই জানুয়ারি ২০২২