Type Here to Get Search Results !

মহা দুর্যোগের সময়ে সমস্যার শেষ নেই, মানুষ বাঁচাতে এগিয়ে আসুন সবাইঃ পি.আর. প্ল্যাসিড, জাপান

দেশে এখন মহা দুর্যোগ চলছে। আমার জানা মতে বিগত একশ বছরে এমন কোন মহামারী দেশের মানুষ দেখেছে বলে শুনিনি, যা সাড়া পৃথিবী ব্যাপী এক যোগে চলমান। দেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাস কয়েক আগেও বেশ গর্বের সাথে বলেছে, প্রবাসীরা দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা আর এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কারণে বলছে পুরো উল্টো কথা। আমি নিজেও যেহেতু একজন প্রবাসী তাই বুক ফুলিয়ে কিছু বলছি না। কারণ আমরা কেউই যে নিজের দোষ স্বীকার করার মত মানসিকতার সংস্কৃতি নিয়ে বড় হই নি। প্রবাসীরা দেশে করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) ছড়িয়েছে বলে যে প্রচার হচ্ছে তাতে দ্বিমত পোষণ করছি না। তবে এই প্রবাসী যখন দেশে ফিরে আসে, কর্তৃপক্ষ তখন করেছেটা কি? আমি নিজেও ফেব্রুয়ারী মাসে দেশে গিয়ে ঘুরে এলাম, তখনই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কিছু কাজ কর্মে নানা অবহেলা বুঝতে পারি। করোনা আক্রান্তের সংবাদ শোনার শুরু থেকে যদি প্রবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করার সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে তা প্রয়োগ করা হতো তাহলে এতটা সমস্যা হতো না। তখন চাইলেই হয়তো কোয়ারেনটাইন থেকে প্রবাসী পালাতো না বা ইচ্ছে করলেই দেশের অভ্যন্তরে প্রবাসীরা ঘুরে বেড়াতে পারতো না। প্রবাসীদের সাথে দেশে সাধারণ মানুষদের যে ধরনের আচরণ করতে দেখছি তা বর্তমান এই সমস্যা শেষ হয়ে গেলে কেউ কি ভুলে যাবে? আমার তো মনে হয় কেউই ভুলবে না। প্রবাসীরা হয়তো কোন পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারবে না কারো বিরুদ্ধে কিন্তু এই প্রবাসীদের দিকেই আবার তাকিয়ে থাকতে হবে দেশের রেমিটেন্স বাড়াতে। তখন মুখ যাবে কোথায়? প্রতিদিন মিডিয়াতে খ্যাতিবানদের মুখে অনেক কথাই শুনছি। দেশে করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী ধরা পরার তিন মাস আগেই নাকী সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। কি যে প্রস্তুতি নিয়েছে তার সর্বশেষ প্রমাণ মনে হয় এন-৯৫ মাস্ক দিয়েই বোঝা হয়ে গেছে, সবাই যে সবার ধান্দায় ব্যস্ত। প্রতিদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অসংলগ্ন বয়ানের কথা ফেইসবুক খুললেই দেখা যায়। কোন কিছুতেই মনে হয় কারো সাথে কোনো সমন্বয় নেই। অনেকটাই যেন দায়িত্ব জ্ঞানহীন। ইদানীং প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হয় তিনি এই দুর্যোগে বড় একা কিংবা বড় অসহায় হয়ে পড়েছেন। যা এসময়ে অন্তত হবার কথা নয়। প্রতিনিয়ত সরকারের বিভিন্ন জন প্রতিনিধিদের ঘর বাড়ি বা গোডাউন থেকে যেভাবে ত্রাণের চাল, তেল উদ্ধার হচ্ছে এতে বঙ্গবন্ধুর সেই হতাশার কথাই মনে পড়ছে বেশী, ” সবাই পায় সোনার খনি, আমারে দিলা চোরের ”। এটি এখন জাতীয় আফসোস। ধরে নিলাম, বাংলাদেশের তিনশ সংসদ সদস্যর মধ্যে সবাই চোর নয় কিন্তু অল্প সংখ্যক খারাপ লোক যে ভালোদের ইমেজ সব নষ্ট করে দিচ্ছে, এ থেকে ভালোরা নিজেদের এড়াবেন কি করে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ার আগে যত না বঙ্গবন্ধু ভক্ত ছিলাম বইটি পড়ার পর যেন ষোল আনা পূর্ণ হলো তার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসার। অকপটে তিনি জামাতে ইসলামের নেতাদের সাথে তাঁর সম্পর্কের কথা লিখেছেন বইটিতে। তাদের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক সম্পর্কের কথা গোপন করেন নি। যারা আওয়ামী লীগের সদস্য বা আদর্শের নয় তাদের কারো মধ্যে ভালো গুন বা নেতা হবার মত যোগ্য হলে বঙ্গবন্ধু তাদের আওয়ামী লীগে যোগদানের আহব্বান করেছেন। যাদের মধ্যে দেশ প্রেম থাকে যাদের সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থাকে তারা কখনও কট্টর হয় না। মানুষের কল্যানে দেশের স্বার্থে কমপ্রোমাইজের রাজনীতি করতেই পারে। যে গুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর মধ্যেই ছিল। যে কারণে তিনি কেবল রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, বাংলার জনগণের বন্ধুও ছিলেন। পঁচাত্তরের পর দেশে অনেক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে। খাল বিল শুকিয়ে আবাস স্থল করা হয়েছে। নদীর পানি ঘোলা হলেও স্রোতের টানে সাগরে গিয়ে পৌঁছেছে । কত পরিবর্তনই না ঘটেছে স্বাধীন এই দেশে। বঙ্গবন্ধু তো সাগর ছিলেন। তাঁর মেয়ে হয়ে তাঁর মধ্যে দীর্ঘদিন যা দেখেছি এতদিনে মনে হচ্ছে তিনি এই মহা দুর্যোগের কারণে একজন মানবিক নেতা হতে চলেছেন। দেশে চোর, বাটপার, ঘুষ খোর এসব নতুন কিছু নয়, সব সরকারের আমলেই ছিল এবং আছে। আগামীতে থাকবে কি না বলতে পারছি না। শেখ হাসিনা দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে মানুষের কল্যাণে লকডাউন করে যেখানে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেবার কথা ভাবছেন সেখানে কতিপয় অসাধু নেতা এবং কর্মকর্তা ত্রাণের চাউল-তেল চুরিতে ব্যস্ত। এসব দেখে দেশবাসী হতবাক। প্রধানমন্ত্রী নিজেও। এজন্যই তিনি কঠোর হস্তে এসব দমন করে শাস্তির যে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন, এতে সত্যিই তিনি প্রশংসার দাবী রাখেন। যা এপর্যন্ত কোন সরকারের আমলেই এমনটা সম্ভব হয়নি। যদিও এমন দুর্যোগও ইতিপূর্বে ঘটেনি। একদিকে দলের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে থাকা চোর দমন করার কড়া নির্দেশ অপর দিকে আজকের এই মহা দুর্যোগে সবাইকে দেশ ও দেশের মানুষদের সহযোগিতার্থে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন তিনি। এমন সময় সত্যিই বলতে ইচ্ছে করে, ” আপনি আওয়ামী লীগ না বি এন পি নাকী জামাত করেন সেটি বড় বিষয় নয়। আপনি দেশ ও দেশবাসীকে যে ভালোবাসেন সেটি প্রমাণের এখনই সময়। অতীতের সবকিছু ভুলে মানুষের জীবন যুদ্ধে সহযোগিতা করুন। মানুষের প্রতি কতটা মানবিক হতে পারেন প্রমাণ করুন এখনই।” ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধু কি সাড়ে সাত কোটি মানুষের নেতা ছিলেন? কিছু লোক তার বিরোধী ছিল, যার বংশ এখনও দেশে বসবাসরত। তারপরেও সাড়ে সাতকোটি মানুষকে একটি স্বাধীন দেশ দেবার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিয়েছেন একটি লাল সবুজের পতাকাও। এর পরের ইতিহাস আমাদের কম বেশী সকলেরই জানা। এবার আমার মনে হয় পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষা করার জন্যই এক ধরনের সুযোগ দিয়েছেন সবাইকে। এই করোনা ভাইরাসের উছিলায় হলেও শেখ হাসিনাকে প্রমাণ দিতে হবে তিনি কেবলই বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা নয়, তিনি সত্যিকারের মানবিক নেতাও। মানবিক কারণেই অন্য যে কোন দলের নেতাদের মধ্যে এখনও যারা সত্যিকারের অর্থে দেশ ও দেশের মানুষদের ভালোবাসেন তাদের দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। নানা সময় আমরা বিভিন্ন মিডিয়ায় ধনাঢ্যদের গল্প পড়ি বা শুনে থাকি। তারা তাদের উপার্জিত অর্থের একটা অংশ দিয়ে ইট পাথরের অট্টলিকা বা ইমারত তৈরী করেছেন। বাকী টাকা থেকে কিছুটা হলেও যেন আজকের এই দুর্যোগপূর্ণ মূহর্তে মানুষের সেবায় কাজে লাগাতে এগিয়ে আসেন সেই প্রত্যাশা করি। --------------------------- পি.আর. প্ল্যাসিড, জাপান
প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক

১৯শে এপ্রিল ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. দাদা,, একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কাউকেই এই কঠিন সময়ে মানুষের কল্যাণময় কাজে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

    উত্তরমুছুন