Type Here to Get Search Results !

Feminism " ......কলকাতা থেকে তৃষা সরকার এর ছোট গল্প

. "আরে মশাই চারিদিকে নারীবাদী নিয়ে এত লাফালাফি আর মানা যাচ্ছেনা বস। ", মুখের ভিতর গরম কাটলেটের একটুকরো ঢোকাতে ঢোকাতে বললেন হরিপদ বাবু" আরে মেয়েরা যদি এতই স্বনির্ভর হয়ে থাকে তাদের কেন এত আলাদা করে দেখা হয় বাবু। " " ঠিকই বলেছেন দাদা ট্রেনে বাসে তাদের জন্য থাকবে আলাদা জায়গা, ডিভোর্স এ তারা চেয়ে নিতে পারবে পাঁচ পুরুষের সম্পত্তি। আবার কোন অজ্ঞাত কারণে পাঁচ বছরে আগে তাদের সাথে ভুল হয়েছিল সে কথা হঠাৎ বুঝতে পেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলবে, Me too র ঝড়। "রঞ্জিত কথাগুলো একনাগাড়ে বলে একটা হালকা ব্যঙ্গাত্মক হাসি হেসে ঝুরিভাজা গুলো পুড়ে দিলো মুখে। এরইমধ্যে হরিপদর স্ত্রী ঘরে আনল তার হাতের স্পেশাল মশলা চা। আজ হরিপদের বাড়িতে খাবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এসেছে রঞ্জিত আর রাহুল। আরে মশাই বলুন তো আমাদের স্ত্রীরাও তো চাকরি করে আমাদের সাথে, পায়ে পা মিলিয়ে চলে, আর এরকমই তো এখনকার মেয়েরা এসব ঠুনকো feminism এর আমাদের কোন দরকার নেই. রান্না করে এক্সহাউস্ট খারাপ হয়ে গিয়েছে চারদিন হলো, গরমে ঘেমে জামাকাপড় ভিজে গেছে নিলিমার এরই মাঝে শাশুড়ির জন্য আলাদা করে চা বানিয়ে দিতে হবে তাকে। ঝুমুর, তাদের পাঁচ বছরের মেয়ে কাল তার পরীক্ষা আছে সময় বুঝে একবার আট এর নামতা টা ঝালিয়ে দিতে হবে নীলিমাকে। "আরে দাদা বৌদি তো খাসা বানিয়েছে ডিমের চপ টা রাহুল আঙুলে হালকা লেগে থাকা অংশটি চাটতে চাটতে বলে, "হরেন হালকা একটু হেসে বলে। " আরে ওই গুনেই তো ফিদা হয়ে বিয়ে করেছি ভাইয়া। গুণ বলতে ওই একটাই" হেসে বলে হরিপদ। রাতের রান্না প্রায় শেষ সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে দুদণ্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে না নিতেই ফোন আসে নীলিমার বসের। ব্যস্ত হয়ে পাশের ঘরে চলে যায় সে। প্রমোশন টাও ক্যানসেল হয়ে যায় তার। প্রমোশন চাইলে নাকি ট্রান্সফার হতে হবে অন্য শহরে আর নীলিমা তা পারবে না। চাকরির সূত্রে হরেন হয়তো বাইরে যেতে পারে কিন্তু সে বাড়ির বউ তাই সে তা পারে না, এটাই বলেছিল হরেন তাকে আগের বারে। তাই প্রমোশনের ইচ্ছা থাকলেও ট্রান্সফারের জন্য সে রাজি হতে পারে না। নীলিমা এমনিও জানে এসব শুধু অজুহাত বস এর কুনজর আর অযাচিত ছোঁয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য, তার এই অবস্থার। সে কথা অফিসের সবাই জেনেও না জানার ভান করে থেকেছে, আবার কয়েকজন উপদেশ দিয়েছি একটু মানিয়ে নিয়ে চলার জন্য। নীলিমার মাথা রাগে ঝিমঝিম করতে লাগল। পাশের ঘরে ঝুমুর একনাগাড়ে নামতাপাঠ করে চলেছে। বাইরের ঘর থেকে ভেসে আসে হাসিঠাট্টার আওয়াজ। চোখের জল মুছে হাসিমুখে যোগ দিল আড্ডাএ। গুছিয়েকান্নার সময় যে নেই তার? রাতে সে না খেয়ে শুয়ে পড়ে। হরেন তা লক্ষ্য করলো না। পান চিবোতে চিবোতে এসে বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করল" নীলু কাল অফিসে আছে তোমার? নীলিমা আলতো গলায় বলে" আছে তবে যাব না ভাবছি শরীরটা ভালো....." তার কথা শেষ হওয়ার আগেই হরেন বলে উঠলো " শরীর খারাপের নামে ছুটি নিতে মেয়েদের কে বা কি বলে বল? যত অসুবিধা হয় আমাদের। অফিসে বলদের মতন খাঁটি তবুও মিষ্টি কথা বলে Appraisal পাবে তোমরা -মেয়েরা। আবার মাঝে মাঝে ইচ্ছা না হলে অফিসে যাবে না তাতেও কোনো বাধা নেই তোমাদের। বেশ ভালোই আছো তোমরা আর তোমাদের ঠুনকোFeminism। " নীলিমার ঘামে প্যাচপ্যাচে শাড়ি, রান্না পরের অকেজো exhaust, কান্নায় ভেজা বালিশ, তার না পাওয়া প্রমোশন উত্তর দিতে পারতো এ প্রশ্নের কিন্তু এই কঠিন উত্তর হয়তো সবার জন্য নয় তাই সে হালকা হেসে বলল "তা সত্যিই বৈকি। "

তৃষা সরকার,কলকাতা

২০শে এপ্রিল ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.