১৯৬০ সালের অক্টোবর মাস। ভারতের আসাম রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা বিধানসভায় অসমিয়া ভাষাকেই রাজ্য ভাষা করার জন্য বিল পেশ করেন। ফলশ্রুতিতে বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার করিমগঞ্জ, শিলচর, হাইলাকান্দি এলাকার আপামর বাঙালি বাংলা ভাষায় কথাবলা, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাংলাভাষাকে স্বীকৃতি--- এই দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে। শতশত সত্যাগ্রহী একজোট হয়ে ১৯ শে মে,১৯৬১ ইং শিলচর রেলস্টেশন চত্বরে জমায়েত হন। সরকার প্রমাদ গুণলেন। সূর্য্য তখন মধ্যগগনে। সমবেত জনতার মনোবল ভাঙ্গতে নামানো হয় প্যারা মিলিটারি। লাঠিচার্জ, কাঁদানো গ্যাসের পাশাপাশি চলে এলোপাতাড়ি গুলি। আহত হন শতশত নিরস্ত্র নর-নারী, শহীদ হন এগার জন। (রাজপথ রক্তাত করে একে একে কমলা ভট্টাচার্য, হিতেশ বিশ্বাস, সুনীল সরকার, শচীন্দ্র পাল, কুমুদরঞ্জন দাস, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুকোমল পুরকায়স্থ প্রমুখ। এদের মধ্যে কুমুদ, সত্যেন্দ্র, হিতেশ ত্রিপুরার স্থায়ী বাসিন্দা--- জীবিকা অর্জনের জন্য সেখানে তাদের যাওয়া আসা। )
১৯ শে মে তাই " মাতৃভাষা মর্যাদা রক্ষা দিবস " --- "ভাষা শহীদ দিবস"।
মনে পড়ে উনিশ মে-র সেই দুর্বিষহ স্মৃতি
ঝড় উঠেছিল আসামের বরাকে মাতৃভাষার প্রণয়ে।
বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল শিলচর রেল স্টেশনে
নিষেধের বেড়া পেরিয়ে উন্মাতাল ছন্দ প্রলয়ে।
ঈশান কোণে জন্ম নেওয়া মাতৃভাষার অধিকারে
যে ভাষা মরমী আকাশে বাতাসে,বন্দীত গানে গানে।
কমলা বোন সহ এগারোটি প্রাণের রক্তের বিনিময়ে
অবশেষে বাংলাভাষা পেল অভিষ্ট স্বীকৃতি সসম্মানে।
আমি শুনাই সে ভাষার কথা
যে ভাষায় খুঁজে ফিরে নিত্য আশ্বাস।
যে ভাষায় জঞ্জাল দূর হয় সত্যের পারাপারে
যে ভাষায় আশা জাগে অন্তরে বারেবারে।
যে ভাষায় মন খুলে বলা যায় বিনম্রতার মাধুর্য্যে
আমি বাঙালি তাই গর্বিত ভাষার অহংকারে।
যে ভাষায় কোটি কোটি মানুষ কথা বলে নিরলস
যে ভাষার আলোকে আজ 'বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস'।
আমি শুনাই সে ভাষার জয়গান সকল আপামরে
যে ভাষার তরে বিশ্বে আজ 'ভাষা শহীদ দিবস' পালিত অকাতরে।
আমি গর্বিত বাঙালি বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে
আমি এই ভাষাতেই জুড়াই পৃথিবীর শোক হাসির কল্লোলে।
অনেক রক্ত অনেক ঝঞ্ঝাবেয়ে এ'ভাষা আজ বিশ্ব বন্দীত মধুর ভাষা হিসেবে
২২ এপ্রিল, ২০১০ ইং ইউনেস্কোর স্বীকৃতি তাই বলে।
কলমে-- মৃণাল কান্তি পণ্ডিত,ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১৯শে মে ২০২১