Type Here to Get Search Results !

বায়না" - একটি ছোট গল্প ঃ সাজ্জাদ হোসেন রিদুল, চাঁদপুর


 বায়না"


যাক অনেকদিন পর আশাটা পূর্ণ হলো। আম্মু আর নানা ভাইকে নিয়ে খুব ভালো মানের একটা সাইকেল কিনলাম।

সাইকেলটার দাম হাজার দশেক টাকা গিয়ে পড়েছে ।সাইকেলটা কিনতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে।আসলে কষ্টটা কোনো আর্থিক সমস্যা না। মূল কষ্টটা ছিলো আমার আম্মুকে রাজি করানো।

আমার বাসাটা স্কুল থেকে বেশ দূরেই ছিলো, আমি স্কুলে আসা যাওয়া করতাম হেটে কখনো রিকশায় কখনো বন্ধুদের সাইকেলে করে।

আমি আম্মুর কাছে অনেকদিন ধরে বায়না ধরার পরও আম্মু কিছুতেই সাইকেল কিনে দিতে রাজি হচ্ছিল না। রাজি না হওয়ার মূল কারণ টা ছিলাম আমি মানে, আমি খুবই ডানপিটে স্বভাবের স্কুল থেকে ফিরে কিছু খেয়ে বা না খেয়ে চলে যাই টই টই করে ঘুরে বেড়াতে এজন্যই মূলত আম্মু সাইকেল কিনে দিতে প্রথমে রাজি হচ্ছিল না।

পরে নানাভাইকে অনেক করে বলে আম্মুকে রাজি করানোর ব্যবস্থা করেছি। পরে আম্মুকে রাজি করানোর পর সাইকেল টা কেনা হলো। আসলে সাইকেলটা আমি কিনেছি স্কুলে যাতায়াতের জন্য না সাইকেল টা কেনার মূল কারণ হলো বন্ধুদের নিয়ে ঘুরার জন্যে।

আমার বাসায় একদমই মন টিকে না আমার ঘুরতে খুবই ভাল্লাগে সেজন্যই স্কুলের একটা শিক্ষা সফরও আমার বাদ যায়নি। যাইহোক আমরা বন্ধুরা মিলে একদিন ঠিক করলাম যে একদিন বিকেলে সাইকেল নিয়ে বের হবো। আমার দুই বন্ধু সাকিব আর নিলয় কে নিয়ে সামনের বৃহস্পতিবার বের হবো বলে ঠিক করলাম। ওদের অনেক আগে থেকেই সাইকেল আছে শুধু আমিই নতুন কিনলাম।


তো যেই কথা সেই কাজ বৃহস্পতিবার হাফটাইম স্কুল ছুটির পর দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বিকেলের দিকে বেড়িয়ে পড়লাম। আম্মুকে বললাম বন্ধুদের সাথে সাইকেল নিয়ে আশেপাশে একটু ঘুরবো। আম্মু আর বাধা দিলো না শুধু বললো সন্ধ্যার আগে যাতে বাড়ি ফিরি।

বন্ধুদের কথামতো নিজের জমানো সামান্য কিছু টাকা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম তো কথামতো স্কুলের পাশে বটগাছের নিচে এসে এক হলাম। তো তিনজনই হাসি মুখে বেড়িয়ে পড়লাম গন্তব্যহীন ভাবে সাইকেল চালানো শুরু করলাম। এ পথ শেষে ও পথ এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, দ্রুত সাইকেল চালানোর কারণে খুব সহজেই পার হতে লাগলাম শীতল হাওয়া খুব ভালোই লাগছিলো। কখন যে সূর্যমামা অস্ত যাওয়া শুরু করলো বুঝতেই পারলাম নাহ্।

তিনজনেই সাইকেল চালাতে চালাতে অনেকটাই ক্লান্ত। নিলয় আর সাকিবকে বললাম সামনেই একটা চায়ের দোকানের টং দেখা যাচ্ছে চল গিয়ে একটু জিরুই আর চা খাই।

আমরা তিনজনই চা খেতে খুব ভালোবাসি। দোকানে গিয়ে বসার পর ওরা বললো, ‘মামা তিনটা দুধ চা দিয়ো’ দোকানদারের চেহারাটা কেমন জেনো অদ্ভুত রকমের দেখতে যাইহোক তিনজনই চা নিলাম চায়ে চুমুক দিতেই আহা কথা  অনুভূতি চা টা সত্যিই অদ্ভুত রকমের মজা হয়েছে। তিনজনই কথা বলতে বলতে চা খাচ্ছিলাম আমি খেয়াল করলাম দোকানদার কেমন করে যেন আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন।


চা খাওয়া শেষ করতে না করতেই হঠাৎ চারদিক অন্ধকার হয়ে বৃষ্টি নামলো। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে গেছে আবার বৃষ্টি ও নেমেছে আমাদের তিনজনের বাসায় নিশ্চিত এতক্ষণে বাবা-মা চিন্তা শুরু করে দিয়েছে।

বৃষ্টি হচ্ছে আমারাও সে টং এর সামনেই বসে আছি। হঠাৎ ই আমি লক্ষ করলাম টং এর পাশের বাশ ঝাড়ে বিদ্যুৎ চমকানোর আবছা আলোতে কি যেনো দেখা যাচ্ছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না সাদা কিছু একটা হবে আমি সাকিব আর নিলয়কে ডাক দিয়ে দেখালাম ওরাও বললো কি যেনো একটা দেখা যাচ্ছে নিলয় একটু ভয় পেয়ে গেলো ও একটু ভীতু।

আমি সাহস করে দোকানদারকে বললাম মামা দেখেনতো ঐ বাশ ঝাড়টাতে কি যেনো দেখা যাচ্ছে। উনি কেমন যেনো হয়ে বললেন, ও কিছুনা  তোমাদের কাজ নেই এখানে বসে আছো.? আমি কিছু না বলতেই সাকিব বলে উঠলো, দেখছেনই তো অনেক বৃষ্টি হচ্ছে আমরা কি আর সাধে আপনার টং এর সামনে বসে আছি !

আমরা তিনজনই একটু ভয় পেয়ে গেলাম। একটু পরে বৃষ্টি থেমে গেলো বাহিরে ঘোর অন্ধকার। যে করেই হোক বাসায় ফিরতে হবে আজকে বাসায় গেলে তিনজনকেই খুব বকা খেতে হবে।

আমি সাকিব আর নিলয় কে বললাম, কিরে এখন বাসায় ফিরবি কি করে.?

নিলয় বলে উঠলো, ভাই আমার খুব ভয় করছে। ওর কথা শুনে আমি আর সাকিব হেসে উড়িয়ে দিলাম। যাইহোক তিনজন যেই রাস্তায় দিয়ে এসেছি সে রাস্তা দিয়েই ফিরবো।

আমাদের তিনজনেরই সাইকেলে লাইট ছিলো তো সেই লাইটের আলো দিয়েই যাত্রা শুরু করলাম।

টং দোকানদার বললো, মামা এতো রাইত কইরা যাইও না বিপদ হইতে পারে।

ওনার কথা পাত্তা না দিয়েই আমরা সাইকেল চালানো শুরু করলাম। এখনো হালকা ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে। অন্ধকারে আবছা লাইটের আলোতে পথ চেনা যাচ্ছেনা তারপরও আমরা সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি।


রাস্তার দুইপাশের তাল গাছগুলো দেখে মনে হচ্ছে দৈত্যের মতো কিছু আমাদের দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমারতো ভয় করছেই আমি বুঝতে পারলাম ওদেরও ভয়ে অবস্থা খারাপ। বাতাসে তালগাছের পাতার ছন ছন আওয়াজে শরীর শিউরে উঠলো।

হঠাৎ ই দেখলাম দূরে একটা ছোট্ট লাল আলোর মতো কি যেনো দেখা যাচ্ছে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগুচ্ছে এটা দেখতেই আমরা সাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সাইকেলের আলোয় ঝাপসা দেখা যাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে যেন কবর থেকে কাফন পড়া কোনো লাশ উঠে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমার তো গায়ের লোম দাড়িয়ে গেছে। নিলয় তো দেখে জোড়ে জোড়ে আল্লাহকে ডাকা শুরু করেছে ওর আওয়াজ শুনে সামনের ভুত টা দ্রুত আমাদের দিকে এগিয়ে আসতেই আমরা পুরো থ একি দেখলাম সাকিব আর নিলয়তো দেখে হা করে তাকিয়েই আছে এতো দেখি একটা মানুষ, বৃদ্ধ মতো হবে সাদা চাদর মুড়ো দিয়ে সিগারেট ফুকতে ফুকতে আসছে। ওনাকে কিছু না বলেই আমরা আবার সাইকেল চালানো শুরু করলাম।


সাইকেল চালাচ্ছি তো চালাচ্ছিই পথ যেনো শেষই হচ্ছে নাহ্। মনে হচ্ছে কোনো ব্লাক হোলে ডুকে গেছি। নিলয় বললো, ভাই পথ মনে হয় হারিয়ে ফেলেছি.!

ওর কথা শুনে মনের ভয়টা একটু বেড়ে গেলো।

ওর কথা শুনে সাকিব বললো, দূর বেটা রাস্তা ভুলিনি.!

কথা শেষ না হতেই দেখি তিন রাস্তার মোড়ে এসে পড়েছি।  যাওয়ার সময় এ রাস্তাটা এরকম ছিল নাকি মনে নেই। এখন কথা হলো কোন রাস্তায় যাবো ডানদিকের রাস্তায় নাকি বামদিকের রাস্তায় এযেন আরেকটা বিপদ সংকেত।

এমনিতেই অনেক রাত তার উপর আবার নির্জন রাস্তা। সাকিব বললো, চল একেকজন একেক রাস্তায় যাই.! 

আমি বললাম, নাহ্ এই অন্ধকার রাতে কেউই আলাদা হওয়ার দরকার নেই

পরে তিনজন মিলে ডানদিকের রাস্তায় ডুকলাম। ডানদিকের রাস্তায় ডুকতে না ডুকতেই শরীরটা কেমন শিউরে উঠলো এ রাস্তাটা যে আরও নির্জন। দূর থেকে ভয়ংকর ভাবে শিয়াল ডাকছে। 

নিলয় বলে উঠলো, তোরা যা ভাই আমি এই রাস্তায় যাবনা।

সাকিব বললো, তুই থাক আমি আর রিদুল যাচ্ছি। আমি বললাম, দেখ এখন ঝগড়া করার সময় না এই রাস্তায় যখন ডুকেছি এই রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরবো।

সাইকেল চালাচ্ছি রাস্তা সোজা কোনো মোড় নেই কেমন যেনো এক অদ্ভুতুড়ে রাস্তা গাছ থেকে বাদুড়ের ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আমাদের তিনজনেরই ভয়ে হাটু কাপছে তারপরও সাইকেল চালানো বন্ধ করিনি, ভয়ে সারা শরীর ঘেমে গেছে।

চারদিক থেকে কেমন যেনো অদ্ভুত রকমের আওয়াজ আসছে। একটু পর পর নুপুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ভয়ে ভয়ে আমরা সাইকেল চালাচ্ছি যে করেই হোক এই ভয়ংকর রাস্তা থেকে বের হতে হবে।

হঠাৎ দেখলাম সামনে মিটি মিটি কিসের আলো জ্বলছে মনে হলো মোমবাতি জ্বলছে ভাবলাম মাজার হবে। কিন্তু কাছে যেতেই নিলয় জোড়ে জোড়ে আল্লাহর নাম জপ শুরু করলো একটু কাছে যেতেই বুঝতে পারলাম এটা একটা শ্মশান।

আগে শুনতাম শ্মশানে ভূত – প্রেত থাকে রাতে নাকি ঘাড় মটকে দেয়, যাদের এখানে পুড়ানো হয় তাদের আত্মা নাকি এখানে দেখা যায়… যাইহোক এসব মনে করে আর ভয় বাড়িয়ে লাভ নেই। শ্মশানের ভিতরে দেখলাম বড় একটা বটগাছ নিচে কয়েকটা মোমবাতির আলো বাতাসে মিটি মিটি করে জ্বলছে। কোথা থেকে যেনো পেঁচার ডাক শোনা যাচ্ছে আসলেই কি পেচা নাকি দেখার জন্য বট গাছটার উপরের দিকে তাকাতেই আমি ভয়ে সাইকেল থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গেলাম।

আমারতো হাত পা পুরো শরীর থর থর করে কাপছে দেখলাম ঝাপসা মতো কিছু একটা অনেকটা মানুষের মতো পা ঝুলিয়ে  বসে আছে বটগাছটায় আমিতো কোনো রকমে সাইকেলে উঠে সাকিব আর নিলয়কে নিয়ে দ্রুত সাইকেল চালাচ্ছি মনে হচ্ছে কেউ আমাদের পিছু নিচ্ছে, মনে হচ্ছে দৌড়ে তেড়ে আসছে ঠক ঠক আওয়াজ করে।

আমি ওদের কে পিছন ফিরে তাকাতে বারণ করলাম আমিও তাকালাম না। শুনেছি শ্মশানের কাছে শাকচুন্নি মানুষের ঘাড় মটকে দেয়। এখনও আওয়াজটা আসছে, ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে।

হঠাৎই কানে আযানের হালকা আওয়াজ পেলাম কাছেই কোনো মসজিদ হবে ভোরের আলো হালকা ছড়াচ্ছে। বুঝতেই পারলাম নাহ্ এই ভুতুড়ে রাত টা কিভাবে শেষ হলো। মসজিদের কাছে যেতেই দেখলাম মানুষ অযু করছে। প্রায় অনেকক্ষণ পরে মানুষ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ভয়টাও আস্তে আস্তে চলে যেতে লাগলো।

আমরাও অযু করে নামাজ পড়লাম পড়ে মসজিদ থেকে বের হবার পর বুঝতে পারলাম আমরা অন্য রাস্তা দিয়ে বাসায় ফিরছি। রাস্তাটা এবার চিনেছি আমাদের বাসা থেকে অনেকটা দূরেই এদিকে কখনও আসা হয়নি।

পড়ে সাইকেলে উঠার সময় লক্ষ করলাম সাইকেলের চাকায় কাঠের টুকরো আটকে গেছিলো বলে ঠক ঠক আওয়াজ আসছিলো।

আমি ওদের দেখলাম এটা দেখে সাকিব বললো, হ্যাভ এ রিলাক্স সি ইউ নট ফর মাইন্ড.! পরে তিনজনই হাসতে হাসতে বাড়ির দিকে চলা শুরু করলাম।












সাজ্জাদ হোসেন রিদুল

শিক্ষার্থী, ১০ম শ্রেণি

মতলব, চাঁদপুর

বাংলাদেশ




১৮ই অক্টোবর ২০২১

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.