Type Here to Get Search Results !

"অম্বুবাচি" কী এবং কেন পালন করা হয় ঃ প্রদীপ কুমার পাল, হাওড়া


"অম্বুবাচি " কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ "অম্ব""বাচি" শব্দ থেকে। "অম্ব" শব্দের অর্থ হলো জল,এবং "বাচি" শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি।অর্থাৎ গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহের পর যখন বর্ষার আগমনে ধরিত্রী সিক্ত হয় এবং নবরুপে বীজ ধারণের যোগ্য হয়ে ওঠে সেই সময়কেই বলে অম্বুবাচী।


আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তৃতীয়পাদ অতীত হলে চতুর্থ পাদে আদ্রা নক্ষত্রের প্রথম পাদের মধ্যে ধরিত্রীদেবী ঋতুমতী হন এই সময়কে অম্বুবাচি বলে।বছরের ঠিক এই সময় অসমের নীলাচল পাহাড়ে যোনিরুপা মহামায়া কামাখ্যাও ঋতুমতী হন।এই সময় তিনদিন মন্দির বন্ধ থাকে। তিনদিন শেষে দেবীর মন্দির বন্ধ থাকে, তিনদিন শেষে দেবীর মন্দির খোলা হয়,দেবীর স্নান ও পূজাচর্না শেষে ভক্তদের দেবী দর্শন করতে দেওয়া হয়।আষাঢ় মাসের ৬ই বা ৭ই আষাঢ় থেকে ১০ই বা ১১ই আষাঢ় পর্যন্ত এই যোগ থাকে। অম্বুবাচী যোগের জগন্মাতা কামাখ্যার এই রক্তবস্ত্র দেহে ধারণ কিম্বা যে কোনো স্থানে জপ,পূজা করলেও সাধকের সাধনা পূর্ণতা লাভ করে এবং অভিষ্ট লক্ষ্য পূরণ হয়।


হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া, ধর্মকৃত্য বা লৌকিক আচার উদযাপিত হয় বিভিন্ন ব্রতও উদযাপিত হয়। অম্বুবাচী বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় "অমাবতী" নামেও পরিচিত। আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে পৃথিবীকে মাতৃস্থানীয় বলা হয়। বেদে বলা হয়েছে ধরিত্রী আমাদের মা।পৌরানিক যুগে বলা হতো মাতা,আর এই ধরিত্রী  মায়ের বুকেই আমাদের জন্ম,শুধু আমাদের কেনো -ফুল,পাখি,প্রকৃতি এক কথায় সবাই পৃথিবী মায়ের সন্তান। প্রতিবছর অম্বুবাচীর এই তিনদিন পৃথিবীর ঋতুকাল ধরা হয়।এর সাথে প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থা জড়িয়ে আছে। এই তিনদিন জমিতে কোন চাষবাস করা হয় না। বর্ষায় সিক্ত পৃথিবী নতুন বছরে নতুন ফসল উৎপাদনের উপযোগী হয়।আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী বা বসুমতী মাতা যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠে, তখন তাকে ঋতুমতী নারীরূপে গণ্য করা হয় এবং শুরু হয় অম্বুবাচী প্রবৃত্তি।তার ঠিক তিনদিন পরে সেটা শেষ হয়,সেটা হলো অম্বুবাচি নিবৃত্তি।এই নিবৃত্তির পরই প্রাচীন কালে কৃষকেরা জমিচাষ করতো। এখনও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ম রক্ষা হয়।ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে এটা রজোৎসব নামেও পালিত হয়। আসামের কামরূপে কামাখ্যা দেবীর মন্দির এই তিনদিন বন্ধ থাকে।এ সময় যারা ব্রহ্মচর্য পালন করেন যেমন -ব্রহ্মচারী,সাধু,সন্ন্যাসী, যোগীপুরুষ, তারা আমিষ গ্রহণ করেন না। নিরামিষ খান তারা কেউই রজঃস্বলা পৃথিবীর উপর আগুনের রান্না কিছুই খান না।বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে থাকেন এই তিনদিন। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের ৭ তারিখে শুরু হয় এবং ১০ তারিখে শেষ হয়।এটা আসলে হিন্দুদের লৌকিক আচার।ওড়িষায় এই পার্বণকে সরাসরি "রজ উৎসব" বলে বর্ণনা করা হয়েছে। 

জয় মা কামাখ্যা


 

প্রদীপ কুমার পাল, হাওড়া

আরশিকথা হাইলাইটস

ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট

২৩শে জুন ২০২২

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.