"- ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা - যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা "- এই অমোঘ মন্ত্রটি উচ্চারিত হয় ভাতৃ দ্বিতীয়ার দিন, বোনেদের মুখ দিয়ে!
ভাই ফোঁটা দিলে কী হয় ?
যমের ভয় থাকে না !
যম ও যমীর ( যমুনা ) মধ্যে যে স্নেহ ও প্রেমের নিগুঢ় বন্ধন, ইহ লোকের ভাইবোনের মধ্যে সেই প্রীতি মধুর ভালোবাসা ও ভাবের পারস্পরিক বিনিময় দেখলে যমরাজ বড়ই প্রীত হন । কারণ ভাই ফোঁটা যমের এক প্রিয় কার্য। তখন যমরাজের অভয় অমৃত দৃষ্টি মরণশীল মানুষের উপর হয় বর্ষিত। বোনের এই ফোঁটাই করে যমভয় নিবারিত, ভাইয়েরা লাভ করে দীর্ঘ পরমায়ূর জীবনদৃপ্ত মহা আশীর্বাদ - যমের দুয়ারে পড়ে কাঁটা।
এই আধুনিক যুগে যতই ভাইবোনের পিতৃ ধনের উত্তরাধিকার নিয়ে চলুক আইনি লড়াই, এই দিন টা এলে, পাষান হৃদয়ের যেকোনো মানুষের মন ক্ষনিকের তরে হলেও মোচড় দিয়ে উঠে।
কে এই যম আর যমী ?
ওঁ যমরাজ নমঃস্তুভ্যায়ং নমস্তে যমুনাগ্রজ !
ত্রাহি মাং কিঙ্ককরোই সার্ধঙ্গ সূর্য্য পুত্র নমঃস্তুতে !!
- হে যম! তুমি সূর্য্য পুত্র, যমুনার অগ্রজ ভ্রাতা, তোমাকে নমস্কার করি । অনুচর বর্গের সহিত তুমি আমাকে রক্ষা করো !!
যম - সূর্য্যর পুত্র, জননী - সরন্যু। সরন্যু ত্বষ্টা বা বিশ্বকর্ম্মার কন্যা, ইনি চারটি যমজ সন্তান প্রসব করেন - প্রথম জোড়ে যম ও যমী, দ্বিতীয় জোড়ে অশ্বিনী কুমার দ্বয়। যমীর আরেক নাম যমুনা।
মৎস্য পুরাণ বলছে - দ্বাদশ আদিত্যর অন্যতম হচ্ছেন যম । তাঁর বাহন মহিষ, প্রধান অস্ত্র গদা । বামন পুরাণ থেকে মহিষের নামটাও পেলাম - পুঁন্ড্রক। আবার বায়ু পুরানের মতে যমের বাহন অঞ্জন ও সংকীর্ণ নামের দুই হস্তী ! যমের প্রধান কর্মচারীর নাম চিত্র গুপ্ত, তাঁর খতিয়ান লেখেন " বিচিত্র " নামের এক কিংকর। ঐ খাতায় জীব মাত্র কেই এক দিন না একদিন গিয়ে নাম লেখাতে হবেই । আমি বা আপনি কারও নিষ্কৃতি নেই। যমের পত্নীর নাম -" ধূমর্ণা " ( পদ্ম পুরাণ ) আবার ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ মতে যমের পত্নী - ক্ষমা ও বরুনানী ! যম নিঃসন্তান। উপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের অভিশাপেই এই দুর্দশা। পুত্রের অকাল মৃত্যু হলে ব্রাহ্মণ তাঁকে অভিশাপ দিয়ে ছিলেন -" তুমি অপুত্রক হও"!
আসলে যমরাজের কাজই হচ্ছে জীবের প্রাণ হরণ করা কিন্ত সাংসারিক মানুষের তা না পসন্দ যার ফলে এ রকম অভিশাপ তো লোকে দেবেই।
তা হলে উপায় ?
ভেবে চিন্তে যম ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে ব্রহ্মা এক শত আট টি ব্যাধির সৃষ্টি করে বললেন -"
এখন থেকে জীবগন ব্যধিতে ভুগে ভুগে মরবে, জীবসংহারের অপরাধ তোমার উপর আর বর্তাবে না "!
একবার যমের বিমাতা -" ছায়া "- যমকে অভিশাপ দিয়েছিলেন ।
যম ও যমী সংজ্ঞার গর্ভজাত। সংজ্ঞা সূর্য্যর তেজঃ সহ্য করতে না পেরে তাঁর অনুরূপ ছায়াকে সূর্যের পাশে রেখে বাপের বাড়ি চলে গেলেন। ছায়া তাঁর নিজের গর্ভজাত সন্তানদের যে ভাবে আদর করতেন সংজ্ঞার সন্তান দের করতেন না। এতে দুঃখ পেয়ে যম পিতা সূর্য দেবের কাছে নালিশ করলে ছায়া রেগে অভিশাপ দিলেন -" তুই প্রেত রাজ হ "!
এদিকে পিতা সূর্য্যদেব পুত্রকে বর দিলেন - তুমি প্রেত রাজ হবে বটে কিন্তু লোকের পাপ পুণ্যের বিচারক হবে এবং লোকপাল হয়ে স্বর্গে বাস করবে।"
আমাদের পুরাণ কাব্যে যমকে নিয়ে অজস্র কাহিনী আছে তাঁর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম _ যমবিজয়িনী সতী সাবিত্রী আর সত্যিবানের আখ্যান, সময় পেলে শোনাবো!
আসুন ভাতৃদ্বিতীয়ার পুন্যলগ্নে আমরা সকল ভাইবোন একত্রে মিলিত হয়ে পরস্পরের মঙ্গল কামনায় ব্রতী হয়ে এই উৎসব পালন করি আর কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি - ** যত ভাইবোন এক হউক এক হউক হে ভগবান ।
সাধন মিত্র,পুরুলিয়া
২৭শে অক্টোবর ২০২২