Type Here to Get Search Results !

।। কার্ত্তিক পুজো ।। সাধন চন্দ্র মিত্র, পুরুলিয়া

।। কার্ত্তিক পুজো  ।।


কার্ত্তিক পুজো দিয়ে শেষ হয় বাঙালীর ফি বছরের উৎসবের মরসুম। যদিও বিশ্বকর্মা, মনসা, দূর্গা, কালী পুজোর মতো বাংলার ঘরে ঘরে আড়ম্বরের সাথে কার্ত্তিক পুজো হয় না তা আজ কালনা কাটোয়া শহর কেন্দ্রিক হয়ে গেছে আর বারবনিতাদের গৃহে।

দেব সেনাপতি কুমার কার্ত্তিক। স্বর্গ রাজ্যের অবিসংবাদিত নেতা, তারক অসুর বধকারী, মহাদেব তনয়।অনেকের ধারণা কার্তিক চিরকুমার। সেটি ভুল। আমি আমার এই আখ্যান টি দুটি বই থেকে -" টুকলি "- করছি - একটা মহাকবি কালিদাসের " কুমার সম্ভব " আর একটি - ব্রহ্ম বৈবর্ত্ত পুরাণ। পুরাণ বলছেন, কার্ত্তিকের স্ত্রী -" দেবসেনা " এবং পুত্রের নাম -" বিশাখ "। কার্ত্তিকের জন্ম কাহিনী যেমন যেমন ব্যতিক্রমী তেমনি কৌতূহল উদ্রেককারী।

  স্বর্গ রাজ্যে ভীষণ বিপদ। তারকাসুরের উৎপিড়নে দেবগন স্বর্গ রাজ্য থেকে বিতাড়িত। বৃত্রাসুর হন্তা দেবরাজ ইন্দ্রের বজ্রও অকেজো তার কাছে। স্বর্গরাজ্যের স্বাধীনতা লুন্ঠিত অসুরের হাতে। যুগে যুগে দেবতারা অলৌকিক শক্তির সাহায্যে অসুর নিধন করেছেন। কিন্তু এতে তাঁদের নিজেদের পৌরুষত্ব কোথায় ? তাঁরা চান এমন এক নেতা যিনি নিজের বাহুবলে উদ্ধার করে আনবেন স্বর্গ রাজ্যের স্বাধীনতার বিজয় লক্ষীকে। এসব কাজে তাঁরা বার বার সাহায্য নিয়েছেন, বিষ্ণু, দূর্গা, কালীর কাছে। কিন্তু সেতো পরিত্রান সমাধান নয়। তাঁরা চাইলেন শিব আর পার্বতীর মিলনে এক -" কুমারের "- জন্ম হোক।

কার্ত্তিকের জন্ম অপ্রাকৃত উপায়ে। তিনি অযোনিজ। শিবের ঔরসে কিন্তু পার্বতীর গর্ভে নয়।

  দক্ষ যজ্ঞ লন্ড ভন্ডের পর, সতী বিরহে মহাদেব মহযোগে লীন। এদিকে স্বামী অপমান সহ্য করতে না পেরে দেহ ত্যাগ করে গিরিরাজ গৃহে মেনকার গর্ভে। দেবতারা দেখলেন এবার শিবপার্বতীর মিলন ঘটালেই -" কুমারের "- সম্ভব হবে।

কিন্তু উপায় ?

মদন !!

শিবের ধ্যান ভাঙাতে পারেন একমাত্র কামদেব মদন। পঞ্চ শরে জীবের চিত্ত হরণ করেন। অরবিন্দ, নব মল্লিকা, রক্তেৎপল, চ্যুত, অশোক এই পাঁচটি ফুলে তাঁর পঞ্চশর। ফুল হলেও তাঁর জ্বালা ভীষণ। তার স্পর্শ মধুর আঘাত জীবকে সম্মোহিতকরে স্তভিত ( সম্মোহণ, উন্মাদন, শোষণ, তাপন ও স্তম্ভন ) করে তোলে। মহাদেব গভীর ধ্যানে মগ্ন, পার্বতী এসেছেন রোজকার মতো পুজো করতে। তিনি জানেন ইনিই তাঁর ইহ কাল পর কাল, নিত্যকালের পতি। হঠাৎ মহেশ্বরের ধ্যান ভঙ্গ। কেনো এই চিত্ত বিকার ? কেনো এই চঞ্চলতা? নিভে যাওয়া কামনার অনল সহসা জ্বলে উঠলো কেনো? চোখ মেলে দেখেন সম্মুখে নবযৌবন সম্পন্না তন্বি কুমারী। দেখলেন গাছের আড়ালে ফুলশর হাতে কামদেবকে। বুঝলেন তাঁর ধ্যান ভঙ্গের কারণ মদন। শান্ত সদাশিব ধরলেন রুদ্র মূর্তি। তৃতীয় নয়ন হতে অগ্নি নির্গত হয়ে দহন করতে চাইল কামদেবকে।" ক্রোধঙ প্রভো, সংহর সংহরতি "- দেবতারা দৌড়ে এলেন, প্রভু ক্রোধ সংবরণ করুণ বলে কিন্তু ততোক্ষনে মদন শেষ। তাঁর পঞ্চশরেরও পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটে গেছে।

এর পরের ঘটনা কালিদাসের লেখনীতে অমর হয়ে আছে, এখানে বর্ণনা অসম্ভব। সংক্ষেপে বলি -

অবশেষে মিলন হলো শিব পার্বতীর। বিবাহের পর কৈলাসে বিহার করছেন ( হানি মুন ) পার্বতীকে আলিঙ্গন বদ্ধ করে এক আবেগঘন মুহূর্তে শিবের তেজঃ ক্ষলিত হয় ধরিত্রীর বুকে। সেই তেজ দেবী ধরিত্রী ধারণ করতে পারেন না। তিনি নিঃক্ষেপ করেন জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে। অগ্নি শুদ্ধ হয়ে সেই তেজঃ নিক্ষিপিত হয় পবিত্র গঙ্গা গর্ভে। হর পার্বতীর তপস্যা, ধরিত্রীর সহিষ্ণুতা, অগ্নির শুদ্ধতা, গঙ্গার পবিত্রতা এতগুলো শক্তির সমন্বয়ে আবির্ভুত হয় এক দিব্যকান্তি কুমারের। গঙ্গা বক্ষে ভাসতে ভাসতে সেই কুমার উপিস্থিত হয় বিশাল এক শর বনে। কিন্তু কুমারকে পালন করবে কে ?

আকাশ পথে যাচ্ছিলেন স্বর্গের ছয় ধাত্রী বা কৃত্তিকা গণ। তাঁরা দেখলেন শর বনে এক দিব্যকান্তি শিশু ভাসছে। মাতৃ স্নেহ বাতসল্যে তাঁদের পিনোন্নত পয়োধর থেকে ঝরে পড়লো স্তনদুগ্ধ। শিশু কোলে তাঁরা দুগ্ধ পান করাতে থাকলেন। একা জননীর স্তন্যে আর কত টুকু পুষ্টি সম্ভব তাই শিশু ছয় মুখ সৃষ্টি করে ছয় জন কৃত্তিকার এক সাথে স্তন্য পান করতে থাকলেন।

তাই কুমার - ষড়া নন - কৃত্তিকাগণ দ্বারা পালিত তাই - কার্ত্তিক

মহাদেবের তেজঃ স্কন্ন ( ক্ষরিত ) হওয়ায় তাঁর জন্ম হয়ে ছিল তাই তিনি স্কন্দ। 


- সাধন চন্দ্র মিত্র, পুরুলিয়া 

১৭ই নভেম্বর ২০২২

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.