Type Here to Get Search Results !

ফুকুশিমার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলল জাপানঃ আরশিকথা দেশ-বিদেশ

আরশিকথা নিউজ ডেস্কঃ

চীনের আপত্তি ও পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ উপেক্ষা করেই সুনামি বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে নিষ্কাশন শুরু করেছে জাপান। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার পর পাম্পের সাহায্যে নিষ্কাশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। খবর আল জাজিরা।

এদিন এক ঘোষণায় পাম্প খুলে দেয়ার বিষয়টি জানায় ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনা সংস্থা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো)। রাজধানী টোকিও থেকে এক ভিডিও বার্তায় টেপকো কর্মকর্তারা জানান, ‘এখন পানি নিষ্কাশন পাম্পগুলোর কাছের ভালভগুলো খুলে দেয়া হচ্ছে।’
 
এ সময় সেখানে জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনে’র (আইএইএ) একটি বিশেষজ্ঞ দল উপস্থিত ছিল। এদিকে জাপানের এই পদক্ষেপে ক্ষোভে ফুঁসছেন পরিবেশপ্রেমীরা। রীতিমতো বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ফুকুশিয়ার তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলার প্রতিবাদ জানিয়েছে জাপানের নাগরিকদের একাংশ। তেজস্ক্রিয়তার আশঙ্কায় প্রবল আপত্তি জানিয়েছে চীনও।
 
এখন থেকে প্রায এক যুগ আগে ২০১১ সালে জাপানের পূর্ব উপকূলে শক্তিশালী এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। যাতে তছনছ হয়ে যায় ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৯ মাত্রার ওই ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে সুনামি প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়। তাতে কার্যত ভেসে যায় হংসু দ্বীপ। মারা যায় প্রায় আঠার হাজার মানুষ।

বড় ধরণের ঢেউ আঘাত হানে ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রে এবং এর পারমানবিক চুল্লি প্লাবিত হয়। যা বড় ধরণের বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটায়। কর্তৃপক্ষ একটি এক্সক্লুসিভ জোন তৈরি করে যা দিন দিন বড় হতে থাকে। কারণ ওই কেন্দ্রটি থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছিল।
 
বিকিরণ বন্ধ করতে কেন্দ্রে সিল করা যে ধাতব টিউবে জ্বালানি ইউরেনিয়াম থাকে, সেই টিউব বা রডগুলোকে ঠান্ডা করার জন্য ব্যবহার করা হয় পানি। যার পরিমাণ প্রায় ৫০০টি অলিম্পিক সাঁতার পুলের পানির সমান।
 
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের কারণে এই পানিও তেজস্ক্রিয় হয়ে যায়। পরিবেশের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সেই পানি প্রায় ১ হাজারটি বিশেষ ধাতব কন্টেইনারে ধরে রাখা হয়।
 
সেই পানিই পরে সাগরে ফেলার পরিকল্পনা করে জাপান। তবে তার আগে তা পরিশোধিত বা যথাসম্ভব তেজস্ক্রিয়তামুক্ত করা হয়েছে বলে সম্প্রতি দাবি করে তা সাগরে ফেলার জন্য জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা আইএইএ-র কাছে অনুমোদন চায় দেশটির সরকার এবং চলতি বছরের জুলাই মাসে আইএইএ’র অনুমতি পায়।
 
আইএইএ জানায়, ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি জাপান যতখানি পরিশোধন করতে পেরেছে, তার মান সন্তোষজনক। এ সংক্রান্ত রিপোর্টও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার হাতে তুলে দিয়ে ‘তেজস্ক্রিয় পানি’ প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলার ছাড়পত্রও দেয়। তবে চীন তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলে, ‘আইএইএ-র রিপোর্ট তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলার ছাড়পত্র হতে পারে না।’
 
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) চীন আবারও জাপানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছে, ‘জাপান সরকার পানি নিষ্কাশনের বৈধতা প্রমাণ করেনি।’ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানি কর্তৃপক্ষের স্থানীয় জনগণের এমনকি বিশ্বের জনগণকে তার নিজস্ব স্বার্থের জন্য ক্ষতি করা উচিত নয়।

চীন বলেছে, এই পানি সামান্য পরিমাণে হলেও মানুষ ও পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলবে। তারা সামুদ্রিক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি পানি ছাড়ার পর তারা বিকিরণের মাত্রাও পর্যবেক্ষণ করবে। সাগরে পানি ছাড়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধিতা করে আসছে জাপানের জেলে সম্প্রদায়ও। এর ফলে মৎস্য শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
 
চীন, চীন শাসিত হংকং ও ম্যাকাও বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানী টোকিও ও ফুকুশিমাসহ অঞ্চলগুলো থেকে আসা জাপানি সামুদ্রিক খাবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, জনসাধারণের উদ্বেগ লাঘব না হওয়া পর্যন্ত ফুকুশিমার মৎস্য ও খাদ্য পণ্যের আমদানি নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। পানি ছাড়া নিয়ে ইতোমধ্যে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক সমাজে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৪ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।


আরশিকথা দেশ-বিদেশ


ছবি ও তথ্যঃ সংগৃহীত

২৪ আগস্ট ২০২৩
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.