রবিঠাকুরকে নিয়ে আমাদের জানার শেষ নেই, আগ্রহেরও শেষ নেই। চিরনবীন এক প্রাণস্পন্দনে আমরা তাঁকে অনুভব করে ক্ষণে ক্ষণে আজও শিহরিত হয়ে চলেছি। তাঁর উপস্থিতি জীবনের সব পূর্ণতায় প্রাধান্য পেয়ে আসছে বহুকাল ধরে। এই চির বিকশিত আনন্দধারা আমাদের তরতাজা করে রাখে জীবনমরণ পেরিয়ে। কালের বিবর্তনের ধারায় পৃথিবী বহু পরিবর্তনের মুখোমুখি হলেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই রবি কিরণের আভায় এক মুহূর্তেরও আলোর ঘাটতি আমরা অনুভব করিনি এবং আগামীদিনেও যে আভার দীপ্তি বাড়বে বই কমবেনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত ধারণা নিয়েই জীবনমরণে পথ চলছি আমরা। গুরুদেব হচ্ছেন আমাদের সেই পথের পথপ্রদর্শক। রবিঠাকুর বলেছেন,"জীবের মধ্যে অনন্তকে অনুভব করারই অন্য নাম ভালবাসা। প্রকৃতির মধ্যে অনুভব করার নাম সৌন্দর্য-সম্ভোগ।" আমরা ভালবাসার অন্তিম পর্যায়ে তাঁকেই অনন্ত ভেবে নিজেকে সমর্পণ করি প্রত্যেক সন্ধিক্ষনে। আর তাঁকেই সর্বত্র অনুভব করে সৌন্দর্য-সম্ভোগে মেতে থাকার প্রয়াসে থাকি।
গুরুদেব বলেছেন,"মানুষ বিশ্বসংসারে যাহা ভালবাসে,আর্টের দ্বারা তাহার স্তব করে।" অনুভবের এক বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে থাকা এই প্রাণপুরুষকে এক অদম্য উদ্দীপনায় রাজ্যের প্রতিভা এবং দক্ষতার নিদর্শনে থাকা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভ্রজিত ভট্টাচার্য এমনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরলেন যা আগামীদিনে বহু অনুভবে ইতিহাস গড়বে। গত দুই বছরের তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফসল এমন এক ভীড়ের সূচনা করে যা আরও এক নতুনের আহবান বাণী শোনায়। শুভ্রজিতের সার্বিক প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে বুধবার(৩০মে) আগরতলা সিটি সেন্টারের আর্ট গ্যালারীতে আগরতলা শহর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনুভব করলো অসাধারণ এক অবাক করা শিহরণে। রবিঠাকুরের জীবনে উদযাপিত প্রতিটি ২৫শে বৈশাখ নিয়ে এই প্রদর্শনীতে শুভ্রজিত তার নির্বাচনের ক্ষমতায় ছবি ও তথ্যের সমাহারে এমন এক মালা গেঁথেছেন যার কোন তুলনা হয়না। অনুভব ব্যক্ত করতে গেলে পুনরায় কবিগুরুর ভাবনাকেই তুলে ধরতে হয় যে "নির্বাচনের ক্ষমতাই ক্ষমতা। লতায় ফুল তো আপনি ফোটে, কিন্তু যে লোক মালা গাঁথে, নৈপুণ্য এবং সুরুচি তো তারই।" প্রদর্শনীর প্রতিটি তথ্য ও চিত্রে বর্ণিত রয়েছে কবিগুরুর কাটানো জন্মদিনের সেইসব মুহূর্তগুলি যেখানে জানা যাবে ঐদিন ঐসময় বা তার আগের দিন তিনি কি অনুভবে ছিলেন কিংবা কারা ছিল সাথে অথবা কি উপহার পেয়েছিলেন...কতটা আনন্দে কাটিয়েছিলেন বা কোন দুঃখের স্মৃতিতে ভেঙ্গে পড়েছিলেন ইত্যাদি আরও অনেক মূল্যবান তথ্য। সত্যি! অনবদ্য এক সংগ্রহ।
৩০শে মে'র এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল তথাগত রায়, বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক-গবেষক সুভাষ সিংহ রায় এবং রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী মানিক্য প্রেসের কর্ণধার তন্ময় রায়চৌধুরী সহ রাজ্যের গুণীজনেরা। অতিথিরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ বক্তব্যে এই অসাধারণ প্রদর্শনীর ভূয়সী প্রশংসা করে রবিঠাকুরের প্রতি নিজেদের ভাবনায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী মানিক্য প্রেসের ভূমিকা। প্রেসের সূচনালগ্ন থেকেই নিখুঁত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সুরুচির বহিঃপ্রকাশে নিজের সৃষ্টিকে সবার সামনে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর এই মানিক্য প্রেস। শুভ্রজিতের এই অসামান্য পদক্ষেপে দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে তথ্য ও চিত্রের সমাহারকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে মানিক্য প্রেস এক অনবদ্য ভূমিকায় থেকেছে। নিজ বক্তব্যে শুভ্রজিতের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে রবিঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসের কর্ণধার তন্ময় রায়চৌধুরী।
রাজ্যের স্বনামধন্য সংস্থা "উড়ান" আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই কর্মসূত্রে বর্তমানে বহিরাজ্যে থাকা সংস্থার সম্পাদক বিপুল ভৌমিকের প্রদর্শনীর অনুভব সহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকারের লিখিত ভাষ্য পাঠ করে শোনানো হয়। শুভ্রজিত ভট্টাচার্যও তার বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং প্রদর্শনীর বাকি দিনগুলিতেও সবাইকে উপস্থিত থাকার বিনম্র আবেদন রাখেন। এখানে উল্লেখ্য যে এই প্রদর্শনী আগামী ৪ঠা জুন অবধি চলবে। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা অবধি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বক্তব্য শেষে রাজ্যপাল এবং অন্যান্য অতিথিরা সহ উপস্থিত সবাই রবিঠাকুরের জন্মদিনের তথ্য ও চিত্রের সমাহারে থাকা এই প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেন। আরশি কথা' আশা রাখে যেঁ আগামীদিনে এই তথ্যচিত্রের সমাহারটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সহ সবার কাছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিষয়ে একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচ্য হবে।
পরিশেষে, আবার তাঁরই অমূল্য ভাবনার দুটি লাইন উল্লেখ করে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম এবং পাশাপাশি এই মহতি আয়োজনের সার্বিক সফলতা কামনা করছি ।
"মানুষ বুদ্ধির পরিচয় দেয় জ্ঞানের বিষয়ে, যোগ্যতার পরিচয় দেয় কৃতিত্বে, আপনারই পরিচয় দেয় সৃষ্টিতে।।"
এডিটর ডেস্ক, আরশি কথা
ছবিঃ নিজস্ব
৩১শে মে ২০১৮ইং