আবু আলী, ঢাকা, আরশিকথা ॥
করোনার শঙ্কা ছাপিয়ে শুরু হলো বাঙালির ভাষা-চেতনার দীপ্ত প্রকাশ অমর একুশে বইমেলা। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেল তিনটায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। আরও বক্তব্য দিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন।
ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ ‘নিউ চায়না ১৯৫২’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী জানিয়েছেন, চলতি বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আর একবছর ধরেই পালিত হয়েছে বাঙালি জাতির জনক, মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এমন একটি বছরে সবচেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বাঙালির সংস্কৃতির বড় উৎসব অমর একুশে বইমেলা পালিত হওয়াই ছিল কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু করোনা বাস্তবতায় নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে এবারের মেলা আয়োজিত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় মেলা চলবে চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।
এদিকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মেলা শুরুর আগেই জানিয়েছিল, দেশব্যাপী নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বইমেলা ঘিরে অনিশ্চয়তা আছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়ে রেখেছেন আয়োজকরা।
এদিকে, বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বইমেলা উদ্বোধনের পরপরই মেলা উন্মুক্ত হয় সবার জন্য।
অমর একুশে বইমেলা পরিস্থিতি বিবেচনায় শুরুর পর থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিনে বইমেলা খোলা থাকবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বাংলা একাডেমির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ১৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন এবং গত একবছরে প্রয়াত বিশিষ্টজনদের জীবন ও কর্ম নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিনই থাকবে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি। অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২০ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২০ বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এছাড়া ২০২০ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।