সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩:১। বিজেপি তিন, কংগ্রেস এক। বড়দোয়ালী কেন্দ্রে জয়ী হলেন বিজেপি প্রার্থী তথা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। তবে কমেছে ভোটের ব্যবধান। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন আরো বেশি ভোট পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। বামেরা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে। এই কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছে ১৭ হাজার, ১৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের আশীষ কুমার সাহা পেয়েছেন ১১,০৭৭টি ভোট। বামফ্রন্টের প্রার্থী রঘুনাথ সরকার পেয়েছেন ৩৩৭৬ টি ভোট। আর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সংহিতা ভট্টাচার্য্য পেয়েছেন ৯৮৬টি ভোট। অর্থাৎ ফরওয়ার্ড ব্লক এবং তৃণমূল দুই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে এবারের নির্বাচনে।
ত্রিপুরাবাসীর সবথেকে বেশি নজর ছিল আগরতলা কেন্দ্রে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শেষ হাসি হাসলেন কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মন। ভোটের দিনে বিজেপি প্রার্থী ডাঃ অশোক সিনহা বলেছিলেন যে তিনি মে জয়ী হবেন তা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। কিন্তু তা আর হলো না। এই কেন্দ্রে সুদীপবাবু পেয়েছেন ১৭,৪৩১টি ভোট। ডাঃ সিনহা পেয়েছেন ১৪ হাজার,২৬৮টি ভোট। তৃণমূলের পেয়েছেন ৮৪২টি ভোট। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর। আর সিপিএমের কৃষ্ণা মজুমদার পেয়েছেন ৬,৮০৮টি ভোট। পরাজয়ের পর অশোকবাবু বলেছেন, যতটা প্রত্যাশা করেছিলেন ততটা ভোটই পেয়েছেন। অন্যদের ভোটের অংকে হিসেবে উলটপালট হয়েছে। অর্থাৎ সিপিএমের ভোট কংগ্রেসের খাতায় গিয়েছে। ঘুরিয়ে তিনি এই কথাই বলতে চেয়েছেন। এবার আসা যাক যুবারাজনগর কেন্দ্রে। সিপিএম জয়ের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল। এই কেন্দ্রটি ছিল সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ এর মৃত্যুতে আবেগ ভোট পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল সিপিএমের। কিন্তু উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রটি সিপিএমের থেকে ছিনিয়ে আনলো বিজেপি।এখানে বিজেপির প্রার্থী মলিনা দেবনাথ পেয়েছে ১৮,৭৬৯ টি ভোট। সিপিএমের শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ পেয়েছেন ১৪ হাজার, ১৯৭টি ভোট। কংগ্রেসের সুস্মিতা দেবনাথ ১৪৪০টি ভোট পেয়েছেন। আর তৃণমূল প্রার্থী মৃণাল কান্তি দেবনাথের জোটে ১০৮০টি ভোট। এখানে কংগ্রেস ও তৃণমূল দুই প্রার্থীরই জামানত জব্দ হয়েছে। জয়ের পর মলিনা দেবনাথ এই জয় যুবরাজনগরবাসীকে এবং সমস্ত কার্যকর্তা ও কর্মীদের উৎসর্গ করেন। আর বিরোধীদের প্রসঙ্গে বলেছেন ওরা ওদের কর্ম অনুযায়ী ফল পেয়েছে। এদিকে ৪৬ নং সুরমা কেন্দ্রে জয়ের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী ছিল তিপ্রা মথা। তাদের প্রত্যাশা ছিল সমস্ত উপজাতি ভোট এক জায়গায় যাবে। আবার সিপিএম এই কেন্দ্র নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিল। তাদের প্রাক্তন বিধায়ক অঞ্জন দাস এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এক সময় এই সুরমা কেন্দ্র ছিল বামেদের শক্ত ঘাঁটি। এবারের উপনির্বাচনে তিপ্রা মথা ও সিপিএম দুই দলকেই পিছনে ফেলে জয়ী হয় বিজেপি।এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী স্বপ্না দাস পেয়েছেন ১৬ হাজার,৬৬৬টি ভোট। মাথার বাবুলাল সৎনামী পেয়েছেন ১২ হাজার,৯৪ টি ভোট। সিপিএমের অঞ্জন দাস চলে গেছেন তৃতীয় স্থানে। পেয়েছেন ৮৪১৫ টি ভোট। আর তৃণমূল কংগ্রেসের এই কেন্দ্রে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাদের ঝুলিতে আসে ১৩৪১টি ভোট। মোটামুটি ভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এবারের উপ নির্বাচনে তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএম এর ভোট অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে। অথচ এই দুই দল ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে।এদিকে বামেদের ক্ষেত্রেও ফলাফল হতাশাজনক বলা যেতে পারে। উপনির্বাচনে কংগ্রেস আন্দোলন, প্রতিবাদ, সংগ্রাম করলেও সিপিএমকে এরকম ভূমিকায় দেখা যায়নি। রাজনৈতিক মহলের অভিমত যদি বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তোলে তাহলে শাসকদলের আটকানো কঠিন ব্যাপার নয়। নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে নিশ্চয়ই সবক'টি দল বিশ্লেষণ করবে। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে ২৩ এর নির্বাচনের। বিরোধীদের মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছেন সুদীপ রায় বর্মন। কংগ্রেসের মরা গাঙে জোয়ার এনেছেন তিনি।আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সংগৃহীত
২৬শে জুন ২০২২