মিস্টার হেদায়েত মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সরকারি কর্মচারী। চার সন্তান এবং পিতামাতা নিয়ে সংসার। স্ত্রী একজন গৃহিণী।সন্তানদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে অধ্যায়নরত তিনজন ।সবাই নিজেরা টিউশনি করে চলে।
সবাই নিজেরা নিজেদের খরচ চালিয়ে কিছু কিছু টাকা বাড়িতে পাঠান। সেই টাকা দিয়ে মিস্টার হেদায়েত ছোট মেয়ের লেখাপড়া এবং নানা রোগে আক্রান্ত পিতামাতার ঔষধ কেনার কাজে খরচ করেন।অবশ্য ছোট মেয়ের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে আছে। মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষার পরেই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। হবু জামাই ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। জেলা শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ি থেকে তিনি প্রতিদিন শহরে আসা যাওয়া করেন অফিস করতে। এতদিন করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য সরকার ঘোষিত ছুটিতে ছিলেন।করোনা আতংকে পুরো এলাকা লকডাউন হওয়ায় এক প্রকার খেয়ে না খেয়ে সময় পার করেছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। সরকারি চাকরি করেন বলে কোনরকম ত্রাণ সহায়তা তিনি পাননি। আজ সরকারি ছুটি শেষ হওয়ায় এবং সরকার ঘোষিত লকডাউন তুলে নেওয়ায় তিনি অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গোসল করে জামাকাপড় পরে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছেন এমন সময় স্ত্রী এসে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বল্লেন বাসায় কোন বাজার নেই। একমাসের বাজার নিয়ে ঘরে ফিরবে।ঘরে থেকে বের হয়ে উঠানে আসতেই বৃদ্ধ মা কাছে এসে বল্লেন বাপরে তোর বাপের শরীরটা ইদানীং খুব খারাপ যাচ্ছে।লকডাউনের কারণে ঔষধ ঠিকমতো খাওয়া হয়নি। তুই যদি পারিস কিছু ঔষধ কিনে আনিস। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠতেই ছোট মেয়ে দৌড়ায় এসে বাবার সাথে স্কুলের পথে রওয়ানা করলো। বাবা মেয়ে গল্প করতে করতে মেইন রোডে পৌঁছাতে মেয়ে বিদায় নিয়ে স্কুলের পথে রওয়ানা হলো। হেদায়েত সাহেব বাসের জন্য অপেক্ষা করতেই বাস চলে আসে। বাসে উঠতেই দেখলেন যাত্রীদের অনেক ভিড়।
মনে মনে ভাবলেন মানুষ লকডাউন থেকে মুক্তি পেয়ে মনের আনন্দে অথবা নিজের জরুরী কাজে শহরে যাচ্ছেন। ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ করে বাসের সুপারভাইজার এসে ভাড়া চাইলে তিনি পয়ত্রিশ টাকা ভাড়া দিলেন। সুপারভাইজার ভাড়া হাতে নিয়ে গুনে আরও পয়ত্রিশ টাকা দাবী করলেন। হেদায়েত সাহেব বল্লেন আমি প্রতিদিন পয়ত্রিশ টাকা দিয়ে যাতায়াত করি।সুপারভাইজার কইলেন ওই মিয়া আপনার কি কোন জ্ঞানবুদ্ধি নেই? দুই মাস যাবত বাস বন্ধ থাকায় মালিকের যে লস হয়েছে সেটাকার জন্য মালিক কি বাড়ির জমি বিক্রি করবে? সেটাকা পোষানোর জন্য ভাড়া ডাবল করা হয়েছে। গেলে যান না গেলে নেমে যান। হেদায়েত সাহেব কোন কথা না বাড়িয়ে পয়ত্রিশ টাকা বের করে সুপারভাইজারের হাতে দিলেন। শহরে বাস থেকে নেমে একটি অটোরিকশা করে অফিসের সামনে নেমে পাঁচ টাকার একটি কয়েন দিলে ড্রাইভার রেগে বল্লেন ভাই আপনি কি ফকিরের ভিক্ষা দিলেন।ভাড়া এখন থেকে দশ টাকা। রাগ সামলিয়ে অফিসে গিয়ে বসতেই বড় স্যারের ডাক পড়লো। স্যারের রুমে গিয়ে দেখলেন অফিসের সকলেই হাজির। বড় স্যার সকলের উদ্দেশ্য বল্লেন দেখুন আপনাদের ডেকেছি একটি বিষয় জানানোর জন্য। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য লকডাউনের সময় আমার এলাকায় গরীব অসহায় মানুষের জন্য আমি ত্রাণ বিতরন করেছি। আপনারা জানেন মানুষ মানুষের জন্য। এই বিপদে মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আর কখন দাঁড়াবো।ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি চলতি মাসের বেতন থেকে আপনাদের সকলের অর্ধেক বেতন আমি কর্তন করবো। আপনার চিন্তা করবেন না এ বিষয়ে একাউন্টসে বলে দিয়েছি। আপনারা এখন মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন। স্যারকে সালাম দিয়ে হেদায়েত সাহেব টেবিলে এসে কাজে মনোযোগ দিলেন। দুপুরে নামাজ শেষ করে ক্যান্টিনে খেতে গিয়ে দেখলেন মূল্য তালিকায় লেখা রয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে খাবারের মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে।এক গ্লাস পানি পান করে তিনি রুমে এসে মেজাজ খারাপ করে পুনরায় কাজ শুরু করলেন। অফিস শেষে বাবার ঔষধ কিনতে গিয়ে দেখলেন ঔষধের দাম বেশি রাখলেন দোকানদার। দোকানদার মুচকি হেসে বললেন হেদায়েত সাহেব ঔষধের সাপ্লাই নেই তাই দাম বেশি। আপনিই বলুন সাপ্লাই আসবে কোথা থেকে। সরকার সবকিছু লকডাউন করে রেখেছিলো। ঔষধ তৈরি না হলে সাপ্লাই হবে কোথা থেকে। আপনার কপাল ভালো ঔষধ পেলেন।
কোন কথা না বলে হেদায়েত সাহেব দোকান থেকে বের হয়ে মুদিবাজারে ঢুকলেন। দ্রব্যমূল্যের দাম শুনে তার বুকে কেমন ব্যাথা এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করলেও নিজেকে সামলিয়ে নিলেন। ভাবলেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারাগেলে বিনা গোসল এবং বিনা জানাযায় লাশ দাফন হতে পারে। তিনি অতিপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী কিনে হেটে হেটে বাসস্টান্ডে পৌঁছালেন। সত্তর টাকায় টিকিট কেটে বাসে বসলেন। তাঁর পাশের সিটের যাত্রী একজন হুজুর। তিনি বললেন ভাই দুই মাসে প্রায় কয়েক লক্ষ গুণ নামাজের সওয়াব নষ্ট হলো সরকার মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ায়। সরকার কাজটি ঠিক করে নাই। রোগ বালাই হলো মুসলমানদের ঈমানী পরীক্ষা। লক্ষ্য করলেন পাশের সিটে দুজন তরুণ তর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।তর্কের বিষয় এমপি মহোদয় যে সকল ত্রাণ দিয়েছেন তা তাদের নিজস্ব তহবিলের নাকি সরকারি তহবিলের। তর্ক শুনতে শুনতে নিজের স্টান্ডে এসে বাস থেকে নেমে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। বাড়িতে ঢুকবার পথে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলে তাড়াতাড়ি ফোন ধরলেন। ফোনের ওপাশ থেকে বড় ছেলে জানালেন বাবা এমাসে বাড়ি কোন টাকা পাঠাতে পারবোনা কারন টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে। ছাত্রের বাপ বলেছেন আমাদের ব্যবসা বন্ধ থাকায় হাতে কোন টাকা নায় তাই আপাতত কয়েক মাস টিউশনি বন্ধ রাখতে। ফোন কেটে দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে বউয়ের হাতে বাজারের ব্যাগ দিতেই বউ চিৎকার দিয়ে উঠলেন পাঁচ জন মানুষের জন্য এবাজার কয়দিন যাবে। কোন কথা না বলে ঘরে ঢুকে জামা কাপড় বদলে টিউবওয়েলের পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে আসতেই ছোট মেয়ে বল্লো জানো বাবা কলেজ থেকে বলেছে দুই মাস কলেজ বন্ধ থাকায় লেখা পড়া অনেক পিছিয়ে গেছে তাই কলেজের স্যারেরা স্পেশাল কোচিং করাবেন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ফিস নিয়ে। কালকেই দুই হাজার টাকা দিতে হবে। মাগরিবের আজান শুরু হলে হেদায়েত সাহেব উঠে নামাজে দাঁড়ালেন।
নামাজ শেষ হতেই ফোন বেজে উঠলে তাড়াতাড়ি ফোন ধরলেন। ছোট ছেলে ফোন করে বলছে বাবা আমার এবং মেঝ ভাইয়ের মেস ভাড়া বাকী পড়েছে। আপাতত সব টিউশনি বন্ধ। তুমি পাঁচ হাজার টাকা কালকের মধ্যে পাঠাবে। কথা শেষে খাটের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর বউ এসে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলেন। চুপচাপ খাবার খেয়ে মশারী টানিয়ে শুয়ে পড়লেন। চোখে ঘুম ঘুম ভাব। হঠাৎ ফোনের আওয়াজে তন্দ্রা দূর হলে ফোন ধরলেন। ফোনের অপরপ্রান্তে হবু বেয়াই সাহেব । বললেন বেয়াই সাহেব একটা জরুরি কথা বলার জন্য এতরাতে ফোন করেছি। আপনার হবু জামাই মানে আমার ছেলে কিছুক্ষণ ফোন করেছিলো। বল্লো সে যে কোম্পানির চাকরি করে সে কোম্পানি আপাতত বন্ধ থাকবে। সরকারের প্রনদোনার টাকা পেলে তবেই কোম্পানি চালু করবে। তাই সে চিন্তা করেছে এলাকায় এসে ব্যবসা করবে। আপনি আপাতত আপনার হবু জামাইকে দশ লক্ষ টাকা দুয়েকদিনের মধ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বিয়ের সময় তখন আর যৌতুক দিতে হবে না। আমি আবার যৌতুক দেওয়া নেওয়া পছন্দ করি না। আমার চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি কোন টাকা পয়সা দিতে হয়নি। সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিয়ে মনে মনে বল্লেন হে আল্লাহ তুমি অনন্তকাল লকডাউন করে রাখো এ পৃথিবীকে অথবা আজীবনের জন্য সকল মধ্যবিত্ত পরিবারকে উঠিয়ে নেও আসমানে।
সবাই নিজেরা নিজেদের খরচ চালিয়ে কিছু কিছু টাকা বাড়িতে পাঠান। সেই টাকা দিয়ে মিস্টার হেদায়েত ছোট মেয়ের লেখাপড়া এবং নানা রোগে আক্রান্ত পিতামাতার ঔষধ কেনার কাজে খরচ করেন।অবশ্য ছোট মেয়ের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে আছে। মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষার পরেই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। হবু জামাই ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। জেলা শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ি থেকে তিনি প্রতিদিন শহরে আসা যাওয়া করেন অফিস করতে। এতদিন করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য সরকার ঘোষিত ছুটিতে ছিলেন।করোনা আতংকে পুরো এলাকা লকডাউন হওয়ায় এক প্রকার খেয়ে না খেয়ে সময় পার করেছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। সরকারি চাকরি করেন বলে কোনরকম ত্রাণ সহায়তা তিনি পাননি। আজ সরকারি ছুটি শেষ হওয়ায় এবং সরকার ঘোষিত লকডাউন তুলে নেওয়ায় তিনি অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গোসল করে জামাকাপড় পরে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছেন এমন সময় স্ত্রী এসে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বল্লেন বাসায় কোন বাজার নেই। একমাসের বাজার নিয়ে ঘরে ফিরবে।ঘরে থেকে বের হয়ে উঠানে আসতেই বৃদ্ধ মা কাছে এসে বল্লেন বাপরে তোর বাপের শরীরটা ইদানীং খুব খারাপ যাচ্ছে।লকডাউনের কারণে ঔষধ ঠিকমতো খাওয়া হয়নি। তুই যদি পারিস কিছু ঔষধ কিনে আনিস। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠতেই ছোট মেয়ে দৌড়ায় এসে বাবার সাথে স্কুলের পথে রওয়ানা করলো। বাবা মেয়ে গল্প করতে করতে মেইন রোডে পৌঁছাতে মেয়ে বিদায় নিয়ে স্কুলের পথে রওয়ানা হলো। হেদায়েত সাহেব বাসের জন্য অপেক্ষা করতেই বাস চলে আসে। বাসে উঠতেই দেখলেন যাত্রীদের অনেক ভিড়।
মনে মনে ভাবলেন মানুষ লকডাউন থেকে মুক্তি পেয়ে মনের আনন্দে অথবা নিজের জরুরী কাজে শহরে যাচ্ছেন। ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ করে বাসের সুপারভাইজার এসে ভাড়া চাইলে তিনি পয়ত্রিশ টাকা ভাড়া দিলেন। সুপারভাইজার ভাড়া হাতে নিয়ে গুনে আরও পয়ত্রিশ টাকা দাবী করলেন। হেদায়েত সাহেব বল্লেন আমি প্রতিদিন পয়ত্রিশ টাকা দিয়ে যাতায়াত করি।সুপারভাইজার কইলেন ওই মিয়া আপনার কি কোন জ্ঞানবুদ্ধি নেই? দুই মাস যাবত বাস বন্ধ থাকায় মালিকের যে লস হয়েছে সেটাকার জন্য মালিক কি বাড়ির জমি বিক্রি করবে? সেটাকা পোষানোর জন্য ভাড়া ডাবল করা হয়েছে। গেলে যান না গেলে নেমে যান। হেদায়েত সাহেব কোন কথা না বাড়িয়ে পয়ত্রিশ টাকা বের করে সুপারভাইজারের হাতে দিলেন। শহরে বাস থেকে নেমে একটি অটোরিকশা করে অফিসের সামনে নেমে পাঁচ টাকার একটি কয়েন দিলে ড্রাইভার রেগে বল্লেন ভাই আপনি কি ফকিরের ভিক্ষা দিলেন।ভাড়া এখন থেকে দশ টাকা। রাগ সামলিয়ে অফিসে গিয়ে বসতেই বড় স্যারের ডাক পড়লো। স্যারের রুমে গিয়ে দেখলেন অফিসের সকলেই হাজির। বড় স্যার সকলের উদ্দেশ্য বল্লেন দেখুন আপনাদের ডেকেছি একটি বিষয় জানানোর জন্য। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য লকডাউনের সময় আমার এলাকায় গরীব অসহায় মানুষের জন্য আমি ত্রাণ বিতরন করেছি। আপনারা জানেন মানুষ মানুষের জন্য। এই বিপদে মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আর কখন দাঁড়াবো।ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি চলতি মাসের বেতন থেকে আপনাদের সকলের অর্ধেক বেতন আমি কর্তন করবো। আপনার চিন্তা করবেন না এ বিষয়ে একাউন্টসে বলে দিয়েছি। আপনারা এখন মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন। স্যারকে সালাম দিয়ে হেদায়েত সাহেব টেবিলে এসে কাজে মনোযোগ দিলেন। দুপুরে নামাজ শেষ করে ক্যান্টিনে খেতে গিয়ে দেখলেন মূল্য তালিকায় লেখা রয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে খাবারের মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছে।এক গ্লাস পানি পান করে তিনি রুমে এসে মেজাজ খারাপ করে পুনরায় কাজ শুরু করলেন। অফিস শেষে বাবার ঔষধ কিনতে গিয়ে দেখলেন ঔষধের দাম বেশি রাখলেন দোকানদার। দোকানদার মুচকি হেসে বললেন হেদায়েত সাহেব ঔষধের সাপ্লাই নেই তাই দাম বেশি। আপনিই বলুন সাপ্লাই আসবে কোথা থেকে। সরকার সবকিছু লকডাউন করে রেখেছিলো। ঔষধ তৈরি না হলে সাপ্লাই হবে কোথা থেকে। আপনার কপাল ভালো ঔষধ পেলেন।
কোন কথা না বলে হেদায়েত সাহেব দোকান থেকে বের হয়ে মুদিবাজারে ঢুকলেন। দ্রব্যমূল্যের দাম শুনে তার বুকে কেমন ব্যাথা এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করলেও নিজেকে সামলিয়ে নিলেন। ভাবলেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারাগেলে বিনা গোসল এবং বিনা জানাযায় লাশ দাফন হতে পারে। তিনি অতিপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী কিনে হেটে হেটে বাসস্টান্ডে পৌঁছালেন। সত্তর টাকায় টিকিট কেটে বাসে বসলেন। তাঁর পাশের সিটের যাত্রী একজন হুজুর। তিনি বললেন ভাই দুই মাসে প্রায় কয়েক লক্ষ গুণ নামাজের সওয়াব নষ্ট হলো সরকার মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ায়। সরকার কাজটি ঠিক করে নাই। রোগ বালাই হলো মুসলমানদের ঈমানী পরীক্ষা। লক্ষ্য করলেন পাশের সিটে দুজন তরুণ তর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।তর্কের বিষয় এমপি মহোদয় যে সকল ত্রাণ দিয়েছেন তা তাদের নিজস্ব তহবিলের নাকি সরকারি তহবিলের। তর্ক শুনতে শুনতে নিজের স্টান্ডে এসে বাস থেকে নেমে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। বাড়িতে ঢুকবার পথে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলে তাড়াতাড়ি ফোন ধরলেন। ফোনের ওপাশ থেকে বড় ছেলে জানালেন বাবা এমাসে বাড়ি কোন টাকা পাঠাতে পারবোনা কারন টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে। ছাত্রের বাপ বলেছেন আমাদের ব্যবসা বন্ধ থাকায় হাতে কোন টাকা নায় তাই আপাতত কয়েক মাস টিউশনি বন্ধ রাখতে। ফোন কেটে দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে বউয়ের হাতে বাজারের ব্যাগ দিতেই বউ চিৎকার দিয়ে উঠলেন পাঁচ জন মানুষের জন্য এবাজার কয়দিন যাবে। কোন কথা না বলে ঘরে ঢুকে জামা কাপড় বদলে টিউবওয়েলের পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে আসতেই ছোট মেয়ে বল্লো জানো বাবা কলেজ থেকে বলেছে দুই মাস কলেজ বন্ধ থাকায় লেখা পড়া অনেক পিছিয়ে গেছে তাই কলেজের স্যারেরা স্পেশাল কোচিং করাবেন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা ফিস নিয়ে। কালকেই দুই হাজার টাকা দিতে হবে। মাগরিবের আজান শুরু হলে হেদায়েত সাহেব উঠে নামাজে দাঁড়ালেন।
নামাজ শেষ হতেই ফোন বেজে উঠলে তাড়াতাড়ি ফোন ধরলেন। ছোট ছেলে ফোন করে বলছে বাবা আমার এবং মেঝ ভাইয়ের মেস ভাড়া বাকী পড়েছে। আপাতত সব টিউশনি বন্ধ। তুমি পাঁচ হাজার টাকা কালকের মধ্যে পাঠাবে। কথা শেষে খাটের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর বউ এসে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলেন। চুপচাপ খাবার খেয়ে মশারী টানিয়ে শুয়ে পড়লেন। চোখে ঘুম ঘুম ভাব। হঠাৎ ফোনের আওয়াজে তন্দ্রা দূর হলে ফোন ধরলেন। ফোনের অপরপ্রান্তে হবু বেয়াই সাহেব । বললেন বেয়াই সাহেব একটা জরুরি কথা বলার জন্য এতরাতে ফোন করেছি। আপনার হবু জামাই মানে আমার ছেলে কিছুক্ষণ ফোন করেছিলো। বল্লো সে যে কোম্পানির চাকরি করে সে কোম্পানি আপাতত বন্ধ থাকবে। সরকারের প্রনদোনার টাকা পেলে তবেই কোম্পানি চালু করবে। তাই সে চিন্তা করেছে এলাকায় এসে ব্যবসা করবে। আপনি আপাতত আপনার হবু জামাইকে দশ লক্ষ টাকা দুয়েকদিনের মধ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বিয়ের সময় তখন আর যৌতুক দিতে হবে না। আমি আবার যৌতুক দেওয়া নেওয়া পছন্দ করি না। আমার চার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি কোন টাকা পয়সা দিতে হয়নি। সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিয়ে মনে মনে বল্লেন হে আল্লাহ তুমি অনন্তকাল লকডাউন করে রাখো এ পৃথিবীকে অথবা আজীবনের জন্য সকল মধ্যবিত্ত পরিবারকে উঠিয়ে নেও আসমানে।
মোঃ হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী
সহকারী রেজিস্ট্রার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাল
২৪শে এপ্রিল ২০২০