মানুষ যা করবে তা হতে হবে বিশ্বাসী ও স্বাভাবিক। হতে হবে দিব্যচোখে সত্য ও সুন্দর। এমনটিই কাম্য সবার।
করোনা কারণে দেশ আজ ভাইরাস প্রতিরোধে একপ্রকার অচল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা, লকডাউনের ফলে কর্মজীবী মানুষ আজ নানা অসুবিধা ও কষ্টে দিন যাপন করছে। ছোট বড় গাড়ি, চলাচলের যানবাহন সব বন্ধ। কিছুতেই কাউকে পথে নামতে দিচ্ছে না প্রশাসন। অন্যদিকে কলকারখানা, ব্যবসাপাতি সব বন্ধ। এই অবস্থায় দেশবাসীর খাদ্য ও নগদ অর্থের অভাব চরমে উঠেছে।
এরপরও জীবন বাঁচাতে সব মানছে জনগণ। এমনি মুহূর্তে এখন বৈশাখ মাস দোর গোড়ায়। দেশব্যাপী চলছে পাকা ধান কাটার মৌসুম। সামনে বর্ষা বাদলের দিন। কখন তলিয়ে যাবে ধান মাঠ, সেই ভাবনাতে কৃষক দিশেহারা।
করোনা সংকটকাল সামাল দিতেই কঠিন সময় পার করছে সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় যখন নেত্রীর কানে এলো কৃষকের সমস্যার কথা। তখন উদ্বিগ্ন হয়ে, তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেন যে যেভাবে পারো মাঠ থেকে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দাও। সবাই দেশের সেবায় কাজ করো।
এরপরই শুরু হলো ধান কাঁটা। প্রথমে ছাত্রলীগ ধান কাঁটতে মাঠে এবং তারা সত্যি সত্যি ধান কেঁটে কৃষকের ঘরে তুলে দিতে লাগলো। তাদের এমন কাজে খোদ নেত্রীসহ দেশবাসী সন্তুষ্ট। দেশের বাহিরেও ছাত্রদের এমন এই দেশপ্রেমে বাহবা আসতে লাগলো। ছাত্রনেতারাও তাদের কাজে আরো বেশী উৎসাহ পেতে লাগলো। এ দৃশ্য যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাইরাল হল, তা দেখে একদল নেতা মজা লুটতে মাঠে যেন পিকনিক শুরু করলো। ব্যস্ত হয়ে পড়লো সিনেমার শুটিংয়ে। বাহ্ দেখা দেখি নেতানেত্রীরা মাঠে নেমেই গেলো। সাথে কর্মীরা এইসব ছবি ভাইরাল করতে লাগলো। তাতেও কি শেষ সব মজার দৃশ্য। এমপি। বড় মাপের নেতা। ছোট নেতা এবার পাকা ধানের বদলে কাঁচা ধানই কাঁটতে লাগলো। কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। কারণ নেতার ছবি তুলতে কর্মীরা চরম পাগল। কার আগে কে সট নিবে। আহা কি কাণ্ড। চারদিকে স্বপক্ষের কর্মীরা দাঁড়িয়ে আছে, নেতা একা ধান কাঁটছে। কি অবাক করা দৃশ্য। নেতা একা কাঁচি হাতে। অন্যেরা সাথে পিছনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িকে। বোধে নাই এতে লাভের চেয়ে সুনাম ক্ষতিই হবে। এক সাংবাদিক বন্ধু আমাকে কয়েকটি ধানকাঁটার ছবি দেখালো। একটিতে একনেত্রীর হাতে একগোছা কাঁচা ধান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাশে বেশকিছু নেতাকর্মী ছবি তোলায় ব্যস্ত। আরেকটিতে তেমনি এক নেতার হাতে একমুঠো ধান। পাশে ২০/৩০ জন নেতাকর্মী গা ঘেঁষে অবস্থান নিয়ে ছবি উঠাচ্ছে। ওদের একজনের হাতেও কাঁচি নেই। আবার ফটো উঠাতে ব্যস্ত কর্মীদের সংখ্যাও বুঝা যাচ্ছে ওরা সংখ্যায় অনেক। ছবিওয়ালাদের কেউ কেউ আবার ভাড়াতেও এসেছে। প্রথম দিকে ছাত্ররা যেটুকু সুনাম অর্জন করেছিলো তা ধুলিসাৎ করে দিল কিছু পাতানো ধান কাঁটার পিকনিক করে। আসলে এখন যা করছে সবটাই যে একেবারে সাজানো সেটি বুঝতে কারো বাকি নেই। সোজা কথা কিছু কাণ্ডজ্ঞানহীন নেতার এহেন হীনকর্মে দেশপ্রেমের বারোটা বাঝাতে বাকি রইলো না। দেশ করোনা ভাইরাস প্রকোপের ভয়ে মহা সংকটে ডুবে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে আছে। দেশ চতুর্দিকে লকডাউনে পুরো স্থবির। ব্যবসা নেই। উৎপাদন নেই। অফিস নেই। এককথায় মহা বিপদগ্রস্ত, মহাশঙ্কায় চলছে দেশ। মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্য চায়। নগদ টাকা চায়। বাঁচার অনুপ্রেরণা চায়। করোনা থেকে বাঁচতে চায়। কৃষকেরা সরল। ওদের অভাব বারো মাস। তারপর এখন করোনা কারণে তারা মস্ত বেহালে আছে। এসময় ঘরে চালের অভাব। আবার নগদ অর্থেরও অভাব। সবমিলে বেসামাল তাদের বাঁচার পথ। তারা এইমুহূর্তে ধান কেঁটে ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে সত্যি। কিন্তু কৃষক সমাজ চায়না উপকারের নামে বজ্জাতি আর উপহাস। ধান কাঁটার বেশে মাঠে নেমে ছবি তোলা এবং পিকনিক করা। নাম না বলার শর্তে একজন প্রবীণ কৃষক জানান, বর্তমানে ধান কেটে কৃষকের ঘরে তোলার নামে যারা ছবি তুলে ভাইরাল করছে, তাদের এই লজ্জাকর কাজ থেকে বিরত থাকার উচিত। এতে কিন্তু নেতাদের সুনাম না বেড়ে নষ্ট হচ্ছে। আর এখনতো মানুষ করোনা ভাইরাস মুখামুখি মৃত্যুর ভয়ে আতংকিত, এসময় সবাইকে অনুরোধ লোক দেখানো কিছু করে নীজের দুর্গতি ডাকবেন না। এতে আপনাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে। তিনি গায়ের কথায় আরো বললেন, ‘বাহে ছবি শুটিং ন করেন, মুগো ধান কাইটে দেন।’
লেখক: বোরহান মেহেদী
সংবাদকর্মী, ঢাকা
বাংলাদেশ
১লা মে ২০২০
এরপরই শুরু হলো ধান কাঁটা। প্রথমে ছাত্রলীগ ধান কাঁটতে মাঠে এবং তারা সত্যি সত্যি ধান কেঁটে কৃষকের ঘরে তুলে দিতে লাগলো। তাদের এমন কাজে খোদ নেত্রীসহ দেশবাসী সন্তুষ্ট। দেশের বাহিরেও ছাত্রদের এমন এই দেশপ্রেমে বাহবা আসতে লাগলো। ছাত্রনেতারাও তাদের কাজে আরো বেশী উৎসাহ পেতে লাগলো। এ দৃশ্য যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাইরাল হল, তা দেখে একদল নেতা মজা লুটতে মাঠে যেন পিকনিক শুরু করলো। ব্যস্ত হয়ে পড়লো সিনেমার শুটিংয়ে। বাহ্ দেখা দেখি নেতানেত্রীরা মাঠে নেমেই গেলো। সাথে কর্মীরা এইসব ছবি ভাইরাল করতে লাগলো। তাতেও কি শেষ সব মজার দৃশ্য। এমপি। বড় মাপের নেতা। ছোট নেতা এবার পাকা ধানের বদলে কাঁচা ধানই কাঁটতে লাগলো। কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। কারণ নেতার ছবি তুলতে কর্মীরা চরম পাগল। কার আগে কে সট নিবে। আহা কি কাণ্ড। চারদিকে স্বপক্ষের কর্মীরা দাঁড়িয়ে আছে, নেতা একা ধান কাঁটছে। কি অবাক করা দৃশ্য। নেতা একা কাঁচি হাতে। অন্যেরা সাথে পিছনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িকে। বোধে নাই এতে লাভের চেয়ে সুনাম ক্ষতিই হবে। এক সাংবাদিক বন্ধু আমাকে কয়েকটি ধানকাঁটার ছবি দেখালো। একটিতে একনেত্রীর হাতে একগোছা কাঁচা ধান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পাশে বেশকিছু নেতাকর্মী ছবি তোলায় ব্যস্ত। আরেকটিতে তেমনি এক নেতার হাতে একমুঠো ধান। পাশে ২০/৩০ জন নেতাকর্মী গা ঘেঁষে অবস্থান নিয়ে ছবি উঠাচ্ছে। ওদের একজনের হাতেও কাঁচি নেই। আবার ফটো উঠাতে ব্যস্ত কর্মীদের সংখ্যাও বুঝা যাচ্ছে ওরা সংখ্যায় অনেক। ছবিওয়ালাদের কেউ কেউ আবার ভাড়াতেও এসেছে। প্রথম দিকে ছাত্ররা যেটুকু সুনাম অর্জন করেছিলো তা ধুলিসাৎ করে দিল কিছু পাতানো ধান কাঁটার পিকনিক করে। আসলে এখন যা করছে সবটাই যে একেবারে সাজানো সেটি বুঝতে কারো বাকি নেই। সোজা কথা কিছু কাণ্ডজ্ঞানহীন নেতার এহেন হীনকর্মে দেশপ্রেমের বারোটা বাঝাতে বাকি রইলো না। দেশ করোনা ভাইরাস প্রকোপের ভয়ে মহা সংকটে ডুবে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে আছে। দেশ চতুর্দিকে লকডাউনে পুরো স্থবির। ব্যবসা নেই। উৎপাদন নেই। অফিস নেই। এককথায় মহা বিপদগ্রস্ত, মহাশঙ্কায় চলছে দেশ। মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্য চায়। নগদ টাকা চায়। বাঁচার অনুপ্রেরণা চায়। করোনা থেকে বাঁচতে চায়। কৃষকেরা সরল। ওদের অভাব বারো মাস। তারপর এখন করোনা কারণে তারা মস্ত বেহালে আছে। এসময় ঘরে চালের অভাব। আবার নগদ অর্থেরও অভাব। সবমিলে বেসামাল তাদের বাঁচার পথ। তারা এইমুহূর্তে ধান কেঁটে ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে সত্যি। কিন্তু কৃষক সমাজ চায়না উপকারের নামে বজ্জাতি আর উপহাস। ধান কাঁটার বেশে মাঠে নেমে ছবি তোলা এবং পিকনিক করা। নাম না বলার শর্তে একজন প্রবীণ কৃষক জানান, বর্তমানে ধান কেটে কৃষকের ঘরে তোলার নামে যারা ছবি তুলে ভাইরাল করছে, তাদের এই লজ্জাকর কাজ থেকে বিরত থাকার উচিত। এতে কিন্তু নেতাদের সুনাম না বেড়ে নষ্ট হচ্ছে। আর এখনতো মানুষ করোনা ভাইরাস মুখামুখি মৃত্যুর ভয়ে আতংকিত, এসময় সবাইকে অনুরোধ লোক দেখানো কিছু করে নীজের দুর্গতি ডাকবেন না। এতে আপনাদের লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে। তিনি গায়ের কথায় আরো বললেন, ‘বাহে ছবি শুটিং ন করেন, মুগো ধান কাইটে দেন।’
লেখক: বোরহান মেহেদী
সংবাদকর্মী, ঢাকা
বাংলাদেশ
১লা মে ২০২০