কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা তাই মেলে দিলাম উত্তরাখণ্ডের মোর ইচ্ছেডানা। পাহাড় আমার ভীষণ ভীষণ পছন্দের জায়গা। পাহাড়ের বৃষ্টিভেজা পথ, মেঘ কুয়াশামাখা আদরের রকমারি সবুজের সমারোহ, নিরিবিলিতে পাখির কুজনে বা পাহাড়ের প্রতিটি অজানার বাঁক,. পাহাড়ের উপরে পড়া সূর্যের আলোর ঝলকানিতে যেন মন হারিয়ে যায়। গত তিন বছর ধরে আমি উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, ভালোলাগা আর মনের চাহিদা পূরণের দাবিতে বারবার একই জায়গায় যেতে মন চেয়েছে। আজ আমি আমার ভালো লাগাটা একটু শেয়ার করব কারণ এই বছরে করোনার ভয়ে হয়তো আর সেই সৌভাগ্য হবে না। তাই কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। এই সমস্ত টাই আমার এক কাছের মানুষের উদ্যোগে হয়েছিল হঠাৎ চা খেতে খেতে। আসলে আমি ঠিক সাহস পাচ্ছিলাম না, কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক সে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছিলো তাই কোনো রকম অসুবিধা হয়নি। চারধাম আর গোমুখ আমার মতন অনেকে গিয়েছেন কিন্তু অনেকেই কার্তিক স্বামী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করে। তাই আজ ইচ্ছা করছে কার্তিক স্বামীর অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভার মধ্যে হারিয়ে যেতে সেই ভ্রমণের স্মৃতি চরণের মাধ্যমে ।
কার্তিক স্বামীর মন্দির থেকে হিমালয়ের বরফ চূড়া দেখার আশায় আমি পৌঁছে গেলাম হরিদ্বার। হরিদ্বারে এক অদ্ভুত গন্ধ আছে যেটা সেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে বেড়ানোর সময় থেকে আমার মনে লেগে আছে। হরিদ্বার থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। প্রথমে আমরা গিয়েছিলাম কেদারনাথ সেটা পরে একদিন গল্প হবে। তাই আজ সোজা চলে যাবো কনৌকচৌরির দিকে। আমরা ছিলাম তিন জন আর আমাদের গাড়ির ড্রাইভার, খুব সাদাসিধে মিশুকে মানুষ। কার্তিকস্বামী মন্দিরে যেতে গেলে খুব ভোরবেলা বেরোনো উচিত তার জন্য থাকতে হবে একটি ছোট্ট গ্রাম কনৌকচৌরি যেখানে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। অল্প মানুষের বাস কিছু হোমস্টে বিরাজমান হয়তো থাকতে পারে সেটা আমার জানা নেই । আমরা ছিলাম মায়াদ্বীপ হলিডে হোম। এখানে একমাত্র গরম জল বা অন্যান্য কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। এখানেকটেজ গুলি ছিলো দুকামরা আর এক কামরা। একমাত্র থাকার জায়গা মায়াদ্বীপ হলিডে হোম নামে হলিডে হোম আসলে এটি একটি উন্নত মানে ইকো রিসোর্ট। পাহাড়ে র ঢালে মাত্র পাঁচটি কটেজ। মানে লোক বেশি হলে জায়গা পাওয়া কঠিন। কটেজ গুলো তাঁবু র আদলে গড়া ভেতরটা বেশ আধুনিক।
কটেজ চারিদিকে ফুল দিয়ে ঘেরা আর সামনে ছিল পাহাড়ের মোহনি রূপ। রাতে খাবার পর বারান্দায় চেয়ারে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম সেই পাহাড়ের দিকে। খুব ঠান্ডার মধ্যে হাত পা অসাড় হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু চাঁদের আলোয় পাহাড়ের রূপসজ্জা দেখার লোভ সামলাতে পারিনি। বেশিক্ষণ বসা হলো না। বন্ধু মনে করিয়ে দিলো পরেরদিন সকালে ভোর চারটের মধ্যে হাঁটা শুরু করতে হবে তাই গুডনাইট জানাতে হলো অনিচ্ছাসত্ত্বেও।
এখানে মার্চ-এপ্রিলে ফুলগুলি আগুনের রুপে রুপসী হয়ে ওঠে। সেইরূপ নাকি চোখ ঝলসে যাওয়ার মতন। আর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বরফে ঢাকা থাকে তাই মার্চ এপ্রিল মাসের ফুলের আগুন এর রূপ দেখার আবদার টা আগে থেকে প্রমিস করে নিয়ে অনির্বচনীয় রূপবতী চৌখাম্বা চোখে চোখ রেখে আমি বললাম আমি কোন এক সময় তোমার আরো কাছে যাবো। তোমার আমার দেখা হবে মদমহেশ্বরে। বিশেষ দ্রষ্টব্য: হরিদ্বার থেকে রুদ্রপ্রয়াগ আসতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা। আবার রুদ্রপ্রয়াগ থেকে কনৌকাচোরি সময় লাগে দু ঘন্টা।তাই হরিদ্বার থেকে ভোর বেলা খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে সন্ধ্যা র মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় কনৌকচোরিতে। তবে অবশ্যই থাকার ব্যবস্থা আগে থেকে ঠিক করে যাওয়া উচিত। এই ট্যুর টা সব কিছু প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন, গাড়ি, হোটেল বুকিং করে দিয়েছিলেন তার ফোন নং এখানে দিলাম ঃ 9639245542
দীপান্বিতা সরকার
কলকাতা
২৪শে মে ২০২০