ঝুলন যাত্রা বাঙালির একটি বিশেষ পার্বণ।এমনিতেই বাঙালিদের বারোমাসে তেরো পার্বণ।শুধু বাঙালি নয়,বৃন্দাবনে অবাঙ্গালীরাও এই উৎসবে মেতে উঠে।শ্রাবণ মাসের শুক্লা প্রতিপদ অথবা শুক্লা একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত ঝুলন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।ঝুলন পূর্ণিমার অন্য নাম 'হল্লীশক'।দ্বাপর যুগে বৃন্দাবনে রাধাগোবিন্দের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে এই ঝুলন যাত্রা উৎসবের সূচনা হয়েছিল।রাধাকৃষ্ণের ঝুলন লীলাকে বলা হয় 'হৃদ্দোল্লাস'।ঝুলন লীলা মূলত বর্ষাকালীন লীলা।শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে শ্রীধাম বৃন্দাবনের বর্ষা রূপের অপূর্ব বর্ণনা রয়েছে।বর্ষার জলে সমস্ত নদী প্লাবিত।আকাশে রামধনু লহর বিস্তার করছে।মেঘের গর্জন শুনে ভেক কূল মনের আনন্দে মৌনতা ভেঙে ডাকতে লাগল।আনন্দে ময়ূররা নৃত্য করছে।পূর্ণিমার রজত কিরণে ভরে গেছে দিগন্ত।বর্ষার অপরূপ দর্শণে আনন্দিত গোবিন্দ।প্রেমময়ী রাধারাণী সহ সখীরা বর্ষাশোভায় তৃপ্ত।বর্ষা ঋতুতে বৃন্দাবন ধাম সেজে উঠেছে নব ভাবে।তাইতো বৈষ্ণব পদকর্তা লিখেছেন --
"নব ঘন কানন শোভন কুঞ্জ
বিকশিত কুসুম মধুকর গুঞ্জ।
নব নব পল্লবে শোভিত ডালা
শারী শুক পিক গাওরে রসাল।"
ব্রজগোপীদের হৃদয়ে আনন্দ ধারা।রিম ঝিম বৃষ্টির ধারা যেন পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।জ্যোতিময় রজনী।চারদিকে বহিতেছে মন্দ মন্দ সমীরণ।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় --
"গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে
মৃদুল মধুর বংশী বাজে
বিসরি ত্রাস লোকলাজ
সজনি আও আওলো।"
বৃন্দাবনে রাধারাণীর অষ্টসখী,যথা:-ইন্দুরেখা,চিত্রা,চম্পকলতা,ললিতা,বিশাখা,তুঙ্গবিদ্যা,,সুদেবী এবং রঙ্গদেবী,কদম বৃক্ষে দোলনা তৈরি করে রাধাগোবিন্দকে বসিয়ে ঝুলন যাত্রা সম্পন্ন করেন।ঝুলন যাত্রাকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে অনেক কবিতা ও সংগীত রচিত হয়েছে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিখ্যাত"ঝুলন" কবিতায় লিখেছেন --
"আমি পরাণের সাথে খেলিব আজিকে মরণখেলা নিশীথবেলা।
সঘন বরষা,গগন আঁধার
হেরো বারিধারে কাঁদে চারিধার....
ভীষণ রঙে ভবতরঙ্গে ভাসাই ভেলা,
বাহির হয়েছি স্বপ্ন শয়ন করিয়া হেলা
রাত্রিবেলা।"
ঝুলন লীলা দর্শনে বৃন্দাবনে গোপবালারা দলবদ্ধভাবে এলেন। রাধা গোবিন্দ আজ ঝুলন মঞ্চে আসীন।রাধাগোবিন্দের অপরূপ মাধূর্যময়ী রূপ দর্শনে তারা মুগ্ধ।বনদেবীও ঝুলনদৃশ্য প্রত্যক্ষ করে হরি হরি বোল ধ্বনি করল।রাধাগোবিন্দের ঝুলন মঞ্চের রূপ মানসে দর্শন করে বৈষ্ণব পদকর্তারা সুর ধরল।
বৈষ্ণব ভক্তদের বিশ্বাস ঝুলন লীলাকথা শ্রবণে হৃদয়ে শুদ্ধ ভক্তি জাগ্রত হয়।তাই আজকের দিনেও ঝুলন পূর্ণিমা আমাদের নিকট বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
- মিঠুন রায়, ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১০ই আগস্ট ২০২২