“চন্দনা”
জাগ্রত চৌরঙ্গীর পাদদেশে দাঁড়িয়ে চব্বিশে চন্দনা
রাতের আকাশে মুঠো মুঠো ইচ্ছে গুলো উড়িয়ে দেয় বাতাসে
জীবনের দৈর্ঘ্য প্রস্থের হিসেব মেলায় পরিমিতির সুত্রের মতন
হঠাৎ তার চোখে শকুনের চোখ পরে, চন্দনা হাত রাখে তার হাতে।
তন্দ্রাহারা চোখ, শকুনের ভোগ, বড় অতিষ্ঠ, নির্লজ্জ
তবু অভিমান নেই, অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই
পুঁইয়ের ডগার মতন বেড়ে ওঠা থকথকে শরীর
বড় নালতে হয়ে যায়, ভোরের আলো ওঠার আগেই।
এক সময়, রোজ সন্ধ্যায় চন্দনাও চুলে বেণী করতো হলুদ ফিতেয়
চুলে তেল চিটচিটে গন্ধ, খানিকটা বেয়ে পরত কপাল জুড়ে,
এখন সেই হলুদ ফিতে বাড়তে বাড়তে, যেন ওড়না হয়ে গেছে
চুলে মেহেদীর ঘ্রাণ, শকুনের শোকে তেল চিটচিটে গন্ধও গেছে দূরে।
ছোট বেলায় বউচি আর গোল্লাছুটে কেউ ছুঁতে পারেনি চন্দনার
ফুসফুস ভরা এক দম নিয়ে, দু’উঠোন ঘুরে আবার নিজের ঘরে,
দুই যুগ পার হওয়া চন্দনাকে, এখন যে কেউ ছুঁতে পারে
রাত ভর দুমড়ে মুচড়ে একাকার, তারপর ভোরে ফেরে।
শৈশবে, আড়াই টাকার কলম বদলে নিয়েছিলো বলে
পঞ্চম শ্রেণীর সহপাঠীর সাথে একদিন কি ধ্বস্তাধস্তি,
চন্দনা এখন নিজেই বদল হয় রোজ রাতে, সেই কলমের মতো
শুধু দামটা আড়াই টাকার একটু বেশী, দর কষাকষি আর জবরদস্তি।
মাঝে মাঝে তবু দু’চোখ খুলে ভাসমান জীবনের গন্তব্য খোঁজে
খুব সাধ হয় ফিরে যেতে, আলোর দেশে
গন্তব্যহীন জীবন, কচুপাতার পানির মতন নড়বরে যৌবন
সব ভুলে, সব ফেলে আবার ফিরে যাব নিজের অঙ্গন।
চন্দনার অভাব, চন্দনার সমাজ, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান......?
হঠাৎ থমকে দাড়ায়, চন্দনার সামনেই বুঝি পুরু দেয়াল।
দিনের আলো নিভে যায়, সন্ধ্যা নামে পৃথিবীর বুকে
পায়ের নখে গোলাপী কুমকুম, চোখের নীচের কালো দাগ ঢেকে
আজও চন্দনা বেড়িয়ে পরে নিঃশব্দে,
পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম, পৃথিবীর সমস্ত সমাজ, দর্শন, বিজ্ঞান
দুই পায়ের মাঝখানে ভাঁজ করে রেখে, শকুনের খোঁজে
চন্দনা, আজও জাগ্রত চৌরঙ্গীর পাদদেশে আছে দাঁড়িয়ে...।
মনোয়ার মানিক
বাংলাদেশ
বাংলাদেশ
২৪শে নভেম্বর ২০১৯