Type Here to Get Search Results !

আমাদের কবি ও মেন্টর শামীম আজাদ, স্বাতন্ত্র‍্যে ও স্বাদেশিকতায়: সাইফুর রহমান কায়েস,বাংলাদেশ

 শামীম আজাদীয় ঘরানা আমাদেরকে অনেকদিন কবিতায় মাতিয়ে রাখবে। এই ঘরানার প্রধান চারিত্র‍্য হচ্ছে আঞ্চলিক শব্দের লাগসই ব্যবহার, সহজবোধ্যতা এবং অধিগম্যতা। কবিতার অবয়বে স্বদেশকে ধারণ করেন তিনি। বংশবীজ তার উল্লেখ্য কীর্তি।
আত্মজীবনীর আড়ে এটি মূলত: একটি জাতির আত্মপরিচয়ের ম্যাগনাকার্টা। একটি জাতির শেকড় অণ্বেষণ করেছেন এর দ্বারা। কাব্যসাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য নাম কবি শামীম আজাদ। দ্বিভাষিক কবি হিসাবে কবির যাপিত জীবনকে দেখি কালের সন্ন্যাসব্রত হিসাবে। কবিতাকে অবলম্বন করে টিকে থাকা একজন কবি ও মেন্টর শামীম আজাদ একারণেই আমাদের নমস্য। কবিতায় স্বাদেশিকতার প্রতিস্থাপন, উপস্থাপনার গুণে কবিতা অনন্য উচ্চতা লাভ করেছে। বাংলা কাব্যভাষা স্বাতন্ত্র্য লাভ করেছে। হয়ে উঠেছে সুপাঠ্য। কবি বাংলাকাব্যে একারণেই উচ্চ মর্যাদা পাওয়ার দাবীদার। পাঠককে কবিতামুখি করেছেন কবি। কবির স্থান আমাদের হৃদয়ে।
কবিতার রূপকল্প,উপমা ও উৎপ্রেক্ষাগুলি আমাদেরকে কবিতা সম্পর্কিত ভাবনার জগতে নতুন করে ভাবতে শেখায়। এক উদ্ভাবনী চিন্তার খোরাক যোগায়। কবি ভাষা নিয়ে বিশেষভাবে আঞ্চলিক ভাষারীতি নিয়ে নীরিক্ষাও চালিয়ে গেছেন সবার অগোচরে, যেটি কবিতামোদিদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি। কবির কবিতার বিষয়বাসনা ও বৈচিত্র‍্য আমাদেরকে কবিতা নিয়ে আরো উদ্যোগী হতে শেখায়,প্রণোদিত করে। কবির কবিতায় ম্ননু থেকে টেমস নদী অবধি যাপিত জীবনের খসড়া লিখিত হতে থাকে। যে জীবন তিনি যাপন করেন সেটি তার অবধারণেরও বিষয়। কবিতাকে তিনি স্বদেশের মতো ধারণ করেন যেমনি ঠিক তেমনি লালনও করেন বলে কবিতা হয়ে উঠে অন্তর্নিবিষ্ট পাঠের উপাদান। কবি হয়ে উঠেন আমাদের জন্য অন্ত্রপথ ও তরিকার চালিকাশক্তি। যে চালিকাশক্তিকে আমরাও কাজে লাগিয়ে কবিতার পাঠোন্মোচন করতে মনোনিবেশ করি।
কবির কবিতার আরেকটি দিক হচ্ছে কবিতাকে তার নিজস্বতা বজায় রেখে চলতে দেয়া। ক্ষুদ্র পরিসর থেকে বৃহতীর দিকে যাত্রা যেটি একজন কবিকে মাটিলগ্ন হতে অনুপ্রাণিত করে। কবি শানীম আজাদ সেইসূত্রে একজন মাটি ও মানুষের কবি। মনু গাঙ তাকে সবসময়ি টানে। প্রাসঙ্গিক কারণেই কবি শামীম আজাদের প্রাসঙ্গিকতা কোনোকালেই অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তাকে পাঠ মানে কবিতার বায়ান্ন গলিতে প্রবেশ করা। আমরা সেই আনন্দযজ্ঞে মেতে উঠতে চাই। সাম্প্রতিক কইন্যাকিচ্ছা আর বংশবীজে সেই পরশখানি আমরা ষ্পষ্টরূপে অনুভব করি। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কবি কবিতার দায় কাধে বহন করে চলেন। কবিতা দিয়েই প্রবাসের জীবন তিনি জয় করেছেন। গ্রীসে,গ্রেট বৃটেনে,রুমানিয়ায় যখন দেখি এক বঙ্গকবি বাংলাভাষা ও সাহিত্যের প্রতিনিধিত্ব করছেন তখন একজন বাঙালি কবিতা কর্মী হিসাবে বুক ফুলে উঠে আনন্দে।
কবিতার পলল জমিনে মানুষে মানুষে সম্পর্কের সৃষ্টির অনুঘটক এবং প্রভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখি তার কইন্যাকিচ্ছা কাব্যগ্রন্থে। এ যেনো কন্যা পরাম্পরাগুলির নাস্তব রূপ। নারী জীবনের পরিবর্তনের চেয়ে রূপান্তরই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। চারপ্রজন্মের একটি গ্রন্থিত রূপ অনায়াসেই উঠে এসেছে সেখানে। যেকারণে একে মাষ্টারপিস বলা যেতেই পারে।
বংশবীজে আমরা দেখি একটি জাতির অভিযোজিত হবার কাহিনী। আত্মপরিচয়ের ধারাবিবরণীতে বাঙালির জীবন, জীবনধারা ও জীবন সংগ্রামের বাস্তব চিত্র। কিন্তে খুন্তা ওমরের ভূমিকায় কবিকে লড়ে যেতে প্রতিনিয়ত। একটি জাতির জাম্পশিপ প্রজন্ম কিভাবে আরেকটি দেশে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তারও একটি অংকিত চিত্র সুনিপুণভাবে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন একজন দক্ষ কথাশিল্পীর ন্যায়। যেকারণে তার মুন্সিয়ানার তারিফ না করাটা অপরাধের তরিকায় পড়ে। অভিবাসী জীবনের যাতনা ও আনন্দ, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার সহ্নিবেশন আমাদেরকে মুগ্ধ করে। যেকারণে বংশবীজ নিয়ে পাঠকের উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই।

সাইফুর রহমান কায়েস
বাংলাদেশ

১৮ই মে ২০২০


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.