Type Here to Get Search Results !

আত্মকথন (পর্ব-২) -- পি আর প্ল্যাসিড,জাপান

ভাওয়াল খ্রিস্টান যুব সমিতি র্কৃক আয়োজিত সেই অনুষ্ঠান ছিল তিনদিন ব্যাপী। আমি ফিরে এসে আমার আগের স্থানে বসলে সুবোধ আমাদের দুজনের উপর ভরসা করে উঠে চলে যায়। চলে গেলে মেয়েটির পাশে বসে ওকে নিয়ে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করার পরের সময় গুলো বেশ ভালোই কেটেছে আমার সেখানে বলা যায়। যেহেতু আমি সংগঠনের বড় একটা দায়িত্বে ছিলাম তখন, তাই অনেক কিছু চাইলেই অন্যদের মত করা সম্ভব হয় নি। এমনকি অনেক ইচ্ছেকে দমন করেছি নিজের ইমেজের কথা চিন্তা করে। তিনদিনের অনুষ্ঠান চলা কালেই মেয়েটির সাথে কয়েকবারই আমার দেখা হয়েছে ভিন্ন স্থানে, ভিন্ন পরিবেশ। ওর সাথে দেখা হলেও বেশি কথা আর বলা হয় নি। রসিকতা করতে গিয়ে মেয়েটিকে এমন ভাবে কথা গুলো বলেছিলাম যা পরে ভেবে অনেকটা লজ্জা পেয়েছি। মনে করেছি, কথা গুলো ওকে এভাবে বলাটা হয়তো আমার ঠিক হয়নি। একসময় আমি বুঝতে পারছিলাম মেয়েটি আমার সাথে যে কথা বলার জন্য সুযোগ খুঁজছে। তখন পর্যন্ত ওর সম্পর্কে আমার কোন কিছুই জানা হয় নি। অনুষ্ঠানের শেষ দিন আবার কাছাকাছি হয়ে আমরা অনুষ্ঠান সঞ্চালন করছিলাম। সেদিন অবশ্য আমি নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছি ওর বিষয়ে। শেষদিন বিভিন্ন কাজে আমি কিছুটা ব্যস্ত থাকায় সহ-সম্পাদকের মাধ্যমে মেয়েটিকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আমি দূরে সরে যাই। সেদিনই আমার জানা হলো সুবোধ আর মেয়েটি যে পূর্ব পরিচিত এবং আত্মীয় হয়। সহ-সম্পাদক সুবোধ সি গমেজ সম্পর্কে আমারও আত্মীয় হয়। আত্মীয় হলেও আমরা সমবয়সী ছিলাম বিধায় আমাদের মধ্যে বন্ধুর মত চলাফেরা ছিল বেশী। যে কারণে রসিকতা করে সে আমাকে প্রশ্ন করলো, - কি? আপনি নাকী তাকে প্রেমের প্রস্তাব করেছেন। শোনার পর আমি যেন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলাম। তার কারণ ছিল, সুবোধের দিয়ে আমার হাঁটে হাড়ি ভাঙ্গার ভয়। যদিও বিষয়টি আমি সেদিন কোন কিছু না ভেবেই বলেছিলাম তারপর আর মাথায় খেলেনি।
যে সময়ের কথা এটি, তখন আমাদের বিশাল এক গ্রুপ ছিল। গ্রুপ বলতে বন্ধু মহল। যখন ওর মুখে এভাবে কথাটি শোনলাম তখন বুঝে গেছি বন্ধু মহল যে বিষয়টি সহজে জেনে যাবে। আমি যখন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হই তার আগে অর্থাৎ সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবার আগে আমি যতটা জেনেছি, সভা অনুষ্ঠিত হবার আগে তিনটি প্যানেল করা হয়েছিল। গোপনে আমাকে দুটি প্যানেল সাধারণ সম্পাদক হবার প্রস্তাব দেয়। আরেকটি প্যানেলের সাথে আমার তেমন যোগাযোগ ছিল না। যে কারণে সাধারণ সভার আগ পর্যন্ত আমি কিছু জানতাম না। সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তেজগাঁও হলিক্রস কলেজের পূর্ব পাশে তেজগাও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে। সেখানে অর্থাৎ সময় মত সভাস্থলে উপস্থিত হবার পর জেনেছিলাম। আমি তখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র। বর্তমানে এটি পূর্ন বিশ্ববিদ্যালয়। সে সময় প্রয়োজনের তাগিদে জগন্নাথে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সংগঠনের সভাপতি (প্রতিষ্ঠাতা) ছিলাম আমি। এরশাদ সরকারের আমলে বেশ বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল। তখন এই সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় আমরা ত্রাণ বিতরণ করি। পুরাতন ঢাকার কিছু বস্তিতে ঘর তৈরী করে দেওয়ার মত কাজও করেছি। এসব কাজ করে বাড়তি সময় পাচ্ছিলাম না। একদিন আমাকে সেই তিনটি প্যানেলের একটির পক্ষ থেকে ফার্মগেইট মনিপুরি পাড়ায় বড়ভাইয়ের বাসায় যেতে বলা হলো। বলা হলো বিশেষ আলোচনা সভা হবে সেখানে। তখন মোটেও আমি সেই বাসায় যেতে রাজী ছিলাম না। তা ছাড়া ভাওয়াল খ্রিস্টান যুব সমিতি নামের এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমার এই বড় ভাই। যেহেতু তার সাথে আমার নীতিগত কিছু বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল তাই তার সামনেই যাবো না এমন মনোভাব ছিল আমার ভিতর খুব শক্ত। কিন্তু সমাজের বিশেষ ব্যক্তিদের অনেকের অনুরোধে নিজের জ্বিদটাকে হাল্কা করে ফেলি সবার স্বার্থে এবং সমাজের জন্য কিছু কাজ করার ইচ্ছায়। বলে রাখা ভালো, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এলাকায় এই সংগঠনের ভূমিকা ছিল অনেক। সবকিছু মানতে রাজী হলেও বড়ভাইয়ের গড়া এই সংগঠনে আমার জড়িত হবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না প্রথমার্ধে। খ্রিস্টান সমাজের কিছু বয়ষ্ক ও ভাল মানুষ আমাকে খুব অনুরোধ করায় কোন ভাবে যেন আমি শেষ পর্যন্ত রাজী না হয়ে পারিনি। রাজী হলেও মাথায় একটা বিষয় সবসময়ই কাজ করছিল। এতবড় দায়িত্ব নেবার পর আমি যে নিজের সংগঠন থেকে হারিয়ে যাবো, তা নিয়ে মনে মনে আগে থেকেই কষ্টের ভাবনা ভাবছিলাম। আগেই বলেছি, সেই সময় আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র। সেখানে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ লিও ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছি, যার সভাপতি (প্রতিষ্ঠাতা) আমি। আমি সভাপতি থাকা অবস্থায় ক্লাবের কর্মকান্ড ছিল উল্লেখ করার মত। যা না বললেই নয়, দেশে এই ক্লাবটি সদস্য সংখ্যার দিক দিয়ে ছিল সবচেয়ে বড়। এই ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন স্থানে অন্য ক্লাবের যে কোন অনুষ্ঠান বা কর্মকান্ডে গেলে বেশ সম্মান পেতাম। আনন্দও ছিল বেশ। সামাজিক সংগঠন করতে গিয়ে সব হারাতে হবে ভেবে কোন ভাবে ক্লাবের কর্মকান্ডকে দুর্বল করে দিতে পারি না মনে হচ্ছিল। তাই বিষয়টি নিয়ে ক্লাবের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম (রতন) এবং সেন্ট্রাল কমিটির সভাপতির সাথে আলোচনা করলাম যুব সমিতির সাথে জড়ানো ঠিক হবে কি না, এ নিয়ে। লিও ক্লাবের সেন্ট্রাল কমিটি ৩১৫-বি এর সভাপতি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মান্নান স্যারের ছেলে বুলু। যদিও তাদের এই সমিতি এবং সমিতির কোন কর্মকান্ড সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না তারপরেও সবকিছু খুলে বলার পর বা বোঝানোর পর দুজন সম্মতি দিলেন আমাদের সামাজিক এই সংগঠনের সাথে জড়িত হতে। পাশাপাশি ক্লাবের ঘনিষ্ঠ সদস্য, যারা আমার শুভাকাঙ্খী ছিল তাদের সম্মতি নিয়ে এই সংগঠনে যুক্ত হতে সম্মতি দিয়ে দাদার বাসায় অন্যদের সাথে আলোচনায় বসি। সত্যি কথা বলতে, এসব কারণে কোন ভাবেই নিজের ইমেজ নষ্ট করতে কোন প্রেম ঘটিত বিষয়ে জড়াতে চাই নি আমি তখন হুট করে। কারণ ছিল, কিছু করতে না পারলেও জীবনে একটা বিষয়ে হারতে চাই নি এবং বড়ভাইয়ের সাথে যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় চ্যালেঞ্জ করার মত প্রতিযোগিতার মনোভাব কাজ করতো আমার মনে। বলতে গেলে এসব কথা ভেবেই মেয়েটির সাথে আমি কথা বলে কোন সম্পর্ক গড়তে আগ্রহ দেখাতে পারি নি সেই সময়। (চলবে)

পি আর প্ল্যাসিড
জাপান

২৮শে জুন ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.