Type Here to Get Search Results !

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "ফেল" : স্বর্ণকমলিকা চক্রবর্তী, আগরতলা

জীবনের প্রতিটি পরীক্ষাতে সবাই পাস করতে চায়। কেউ ফেল করতে চায় না। আর যদি দুর্ভাগ্যক্রমে কেউ অকৃতকার্য হয় তবে তখন চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়। যেন ইচ্ছে করে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তখন কার ঘাড়ে যে প্রকোপ পড়বে, সেটা যে ফেল করেছে সেই বলতে পারবে। কারণ এই পরাজয় কে যে মন থেকে মেনে নেওয়া যায় না এবং এর ফলে মানসিক অবসাদ, শরীর খারাপ কত কিছু হতে পারে।

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "ফেল" গল্পের দুই নায়ক নলিন এবং নন্দ এক বংশের ছেলে কিন্তু দুই খণ্ডে পৃথক, বসতবাড়ির মাঝখানে দেওয়াল। কেউ কারোর মুখ দর্শন করতে চায় না। কিন্তু ওরা এক স্কুলে এক ক্লাসে পড়ে।

      নন্দ পড়াশোনা করত, তাই প্রতিবারে প্রাইজ পেত। কিন্তু বেচারা নলিন বাড়ি এসে কতৃপক্ষকে দোষারোপ করত। ভাবটা এমন ছিল যে তাদের জন্যই সে প্রাইজ পাবার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হচ্ছে না। কিন্তু নন্দ বি এ পাস করে ফেলল। অপরদিকে নলিন ফিল করতে করতে এন্ট্রান্স ক্লাসে এসে আটকা পড়লো।

      এই নলিনের মনের মধ্যে সব সময় একটা ভাবনা কাজ করতো যে সে কিভাবে নন্দ কে পরাজিত করতে পারবে এবং এই ভাবনার ফলে সে কলকাতার মেয়ে পছন্দ না করে রাওয়ালপিন্ডির এক সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করবে ঠিক করল। ভাবলো নন্দ নিশ্চয়ই কলকাতার মেয়ে বিয়ে করবে, সে এবার ওর থেকে উপরে থাকবে।

       কিন্তু সুস্থ, সুন্দর মানসিকতা তো ওর ছিল না, ছিল ওর কাছে স্তাবকের দল। তাই যখন শুনলো নন্দ কলকাতার মেয়ে বিয়ে করছে, তখন সে সুযোগ করে সেই মেয়ে দেখলো, আর দ্বিধাগ্রস্ত মন বললো যে এই মেয়ে রাওয়ালপিন্ডির মেয়ের চেয়েও সুন্দর। বিচার করার ক্ষমতা যে ওর ছিলনা। পারিষদ দলকে জিজ্ঞেস করাতে তারা বলল কলকাতার মেয়ে সুন্দর। অতএব টাকা দিয়ে নন্দের বিয়ে ভাঙ্গিয়ে সে কলকাতার সেই মেয়েকে বিয়ে করল। পারিষদ দলকে সে বাহবা জানালো এবং বললো যে সে এবার আসল বি এ পাস করলো। নন্দ ফেল করলো। নন্দকে ফেল করাতে পারে সে এতদিনে যেন শান্তি পেল।

       কিন্তু নলিন কিভাবে শান্তি পাবে? কারণ স্তাবকের দল যখন জানালো যে নন্দ সেই রাওয়ালপিন্ডির মেয়েকে বিয়ে করছে তখন প্রথমে সে খুব খুশি হলো কারণ সে ইচ্ছে করে ওই মেয়েকে বিয়ে করে নি। কিন্তু সেই খুশি যে ওর বেশিক্ষণ রইল না। কি করে থাকবে? সে যে ছল করে নন্দর বিয়েটা ভাঙ্গিয়ে ছিল, ওকে ফেল করাবার জন্য? আর সেই সংশয়াসিত মন রাওয়ালপিন্ডি মেয়ের ফটো যেটা বিয়ের আগে পেয়েছিল সেটা খুলে মেলাতে লাগলো। মন বলছে, চোখ বলছে রাওয়ালপিন্ডি অনেক সুন্দর। আহা! এমন মেয়েকে নিজের হাতে হাত ছাড়া করল? এত বড় পরাজয় সে কি করে মেনে নেবে? জীবনে একবার সে নন্দকে ফেল করাতে চেয়েছিলো, সেটাও সে করতে পারল না। সে জীবনে যে অনেক ফেল করেছে, আর এবার ফেল করাতে গিয়ে সে এমনভাবে ফেল করলো? নন্দ পাস করে গেলো সুন্দরভাবে? না, না এ ফেল সে মানতে পারছে না।

       ওর পারিষদ হাজরা এলো ওর সাথে পরিহাস করতে, সে দারোয়ানকে ডেকে বলল ওর কান ধরে ওকে বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য। কারণ ওরাই যে তাকে উস্কানি দিয়েছে এই মেয়েকে বিয়ে করার জন্যে। ওর নিজের বিবেকবোধ যে তখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেটা তো আর সে বুঝতে পারবে না। অতএব সে ফেল করেছে মানে ওকে ফেল করানো হয়েছে।

স্বর্ণকমলিকা চক্রবর্তী, আগরতলা


আরশিকথা অতিথি কলাম

২৫শে বৈশাখ ২০২২ইং

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.