Type Here to Get Search Results !

আপনার মেয়েকে শুধু লক্ষীসোনা নয়, গড়ে তুলুন মা কালী রূপে ঃ সপ্তর্ষি লস্কর, ত্রিপুরা

নারী বা মেয়ে মানুষ এই শব্দটি শুনলেই সকলের মাথায় একটা বদ্ধমূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অবয়ব চলে আসে। নারী বা মেয়ে হবে লক্ষীমন্ত মানে একেবারে শান্তশিষ্ট, লাজুক,নীচু স্বরে কথা বলা, সাত চড়ে ও রা না করা, ঘরের সব কাজ মন দিয়ে করা, রান্না বান্না, সেলাই, যত্ন আত্তি মোট কথা জুতো সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ সবেতেই নিপুণা। আর মেয়ে বা নারী মানেই সে হবে মমতাময়ী, দয়ার ভান্ডার, তার সমস্ত সত্তা উজাড় করে সে শুধু ভালোবেসে যাবে বিনিময়ে যা-ই জুটুক সে সবসময় থাকবে হাসিমুখে। স্বামী, শ্বশুর - শাশুড়ি, সংসারের প্রতিটি মানুষের মন বুঝে, মন জুগিয়ে তাকে চলতে হবে নীরবে। তবেই সে লক্ষী মেয়ে তবেই সে লক্ষী বউ।

সেকাল থেকে একাল পরিবর্তন হয়েছে অবশ্যই আজ মেয়েরা শুধু প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি নয়, মহাকাশেও পাড়ি দিচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য শুধু দেশে নয় যাচ্ছে বিদেশে ও। পাশাপাশি আজকের মেয়েরা কর্মজীবনেও প্রতিটি পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তবুও তথাকথিত সমাজ আজও পক্ষ পাতিত্ব করেই যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রেই মেয়েদের মেয়েদের ও সমান অধিকারের কথা মুখে বললে ও মেয়েদের যোগ্যতা নিয়ে আজও বৈষম্য করা হয়। যদি কোনো মেয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতায় বা চাকরী ক্ষেত্রে পুরুষের চাইতে উচ্চতর স্থানে পৌঁছে সেই মেয়েকে আজও শুনতে হয় সে শিক্ষকদের বা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুগ্রহে সেই স্থানে পৌঁছেছে। কারন তথাকথিত পুরুষ সমাজ প্রতিযোগীতায় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারে না। এখানেও একটা হীনমন্যতা কাজ করে।

ছোটোবেলা থেকেই মেয়েদের মনে ও গেঁথে দেওয়া হয় লক্ষীমন্ত হওয়ার সব বৈশিষ্ট্য তাই তারাও সহজেই যে কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও আওয়াজ উঠাতে পারে না, পাছে তার লক্ষী মেয়ে ইমেজটি ভেঙে যায়। তাকে সবসময় শুধু মানিয়ে নিতেই শেখানো হয়। তাই যখন উচ্চ শিক্ষার খাতিরে বা চাকরী সূত্রে বিভিন্ন নূতন মানুষ নূতন পরিবেশের মাঝে যায় সে সহজেই কিছু মানুষ রূপী হিংস্র হায়েনার লালসার শিকার হয় আর মুখ বুজে সমস্ত সহ্য করতে থাকে। বিয়ের পর স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির মানুষের নির্যাতনের শিকার হয়েও সে মুখ বুজে সংসার করতে থাকে। আর এভাবেই একদিন সে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়।

এর জন্য দায়ী কে? দায়ী আমারই।

আমাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। 

আপনাদের আদরের ছোট্ট সোনাটিকে ছোট থেকেই অন্যায়ের সাথে আপোষ করা নয়,শেখান অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। আপনার মেয়েটিকে শুধু লক্ষী মেয়ে নয়, শেখান পরিস্থিতি বুঝে মহিষাসুর মর্দিনী হয়ে উঠতে, তাকে বলুন তার দিকে বাড়ানো মানুষ রূপী হিংস্র পশুদের হাত মা কালী হয়ে গুড়িয়ে দিতে।

মেয়েদের পড়াশোনার ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি অবশ্যই আত্মরক্ষার কৌশলের প্রশিক্ষন দিন। সবসময় আপনি বা কেউ তার সাহায্যের জন্য না ই থাকতে পারে তাই শুরু থেকেই তাকে বিভিন্ন আত্মরক্ষার কৌশল সম্বন্ধে সঠিক প্রশিক্ষন এর ব্যবস্থা করুন। 

ইদানিং আমাদের দেশে নারী নিগ্রহের ঘটনা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। কর্ম ক্ষেত্রে, পথেঘাটে, জনবহুল জায়গায়, এমনকি বাড়িতেও প্রতিনিয়ত কিছু অপরিচিত বা আপনজনের দ্বারাও নিগ্রহের ঘটনা ঘটে চলেছে। তাই নারীকে এখন অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, হতে হবে আত্মনির্ভর। মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক টাই বাড়িয়ে তুলতে সহায়ক। বিপদে পড়লে বেঁচে আসার মতো কিছু কৌশল রপ্ত করতে হবে অবশ্যই। এতে নিরাপত্তা তো পাবেই মেয়েদের শরীরও থাকবে ফিট। 

এখন বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার আত্মরক্ষার কৌশল প্রশিক্ষন কেন্দ্র রয়েছে যেখানে মার্শাল আর্ট, জুডো, কেরাতে, তায়কোয়ান্দো, বক্সিং সহ আরো বিভিন্ন পদ্ধতিতে অভিগ্ঘ প্রশিক্ষক মন্ডলী দ্বারা আত্মরক্ষার প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে। তাই আজই আপনার ছোট্ট সোনাটি কে আত্মরক্ষার কৌশল প্রশিক্ষন কেন্দ্রে ভর্তি করে তার অবাধে পথচলার রাস্তা টিকে আরও একটু মসৃন করে তুলুন। 

শুধু কোমলমতি, গৃহকর্মে নিপুণা, শান্ত শিষ্ট নয় --- মেয়ে কে গড়ে তুলুন আত্মবিশ্বাসী, নির্ভীক ও প্রতিবাদী একটি মানুষ হিসেবে।


সপ্তর্ষি লস্কর, ত্রিপুরা


আরশিকথা হাইলাইটস

১৪ই মে, ২০২৩

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.