Type Here to Get Search Results !

ঘুরে আসুন ভারতের স্কটল্যান্ড কুর্গ শহর ।। রীণা দাস ।। আরশিকথা ভ্রমণ

কুর্গ শহরের গল্প বলি শোন---

ভারতবর্ষের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় অবস্থিত দক্ষিণ ভারতের স্কটল্যান্ড কুর্গ। সদর শহর মাদিকেরী।ব্যাঙালুরু থেকে  রাত দশটায় বাস ছাড়লো।পরের দিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় বাস এসে থামলো মাদিকেরী বাস স্টপে।ভোরের আলো তখনও ফুটে নি।কেবল অটো,ওলা,ওবেরগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী ভীড়ের অপেক্ষায়।রাস্তার পাশে খুঁটির বিশাল বিশাল লাইটগুলো কুয়াশার চাদরে মুড়ে নিয়ে লাইনর রূপ নিয়েছে।বাস থেকে নেমে চোখ তুলে তাকাতেই মেঘেপুঞ্জের দৌড়াত্ব চোখে পড়লো।ভেসে ভেসে এরা দেশ থেকে দেশান্তরে পাড়ি জমাচ্ছে।মেঘের সামিয়ানার তলে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল যদি এদের মতোই উড়তে পারতাম।যাই হোক আমাদের পূর্ব নির্ধারিত গাড়ির ড্রাইভারের ডাকে সম্বিত ফিরে এলো।

হোম স্টে আগেই ঠিক করা ছিলো।স্টপেজ থেকে এক কিমি দূরে হোম স্টেতে এনে গাড়ি দাঁড় করালো।দোতলা ঘর।আমরা উপরের তলাতে।চোখের সামনে সবুজ পাহাড় আর সেই পাহাড়ের চূড়ায় সাদা তুলোর মতো পেঁজা পেঁজা মেঘ পাহাড়টাকে আলতো ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে।চোখ সরিয়ে আনলাম জোর করেই। সবে পাখি জাগছে চারদিক কলরবে মুখরিত করে।কত অজানা পাখির ডাক ! রুমে পা রেখেই ব্যাগ পোটরা রেখে বের হয়ে গেলাম ছেলেকে নিয়ে।মন বিবাগী হয়ে যায় এমন জায়গায় এলে ।প্রকৃতির অমোঘ শক্তি সাংসারিক সমস্ত মায়া মোহ যেন শুষে নেয় এক লহমায়।এজন্য মানব প্রকৃতিকে মাঝে মাঝে ঝেরে ফেলার জন্য প্রকৃতির কোলে আসতে হয়।পাহাড়ের কোল ধরে ছেলেকে নিয়ে হাঁটলাম প্রায় চার কি.মি।সবকিছুই যেন অনাঘ্রাত।যা দেখি যেন সব নতুন। আর নতুনকে খুঁজে নেওয়ার তাগিদ যখন আসেতখন প্রকৃতিই যেন সমস্ত শক্তি উজাড় করে দেয়।নয়তো মানুষের প্রকৃতিকে খোঁজার শক্তি আসার কথা নয়।

হাঁটতে হাঁটতে চারপাশের নতুনের স্বাদ নিয়ে রাস্তার পাশে দোকানে কফি কাপে চুমুক দিলাম সাথে পকোড়াও।চোখের সামনে যেদিকে তাকাই  সেদিকেই  মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা।তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিল।মোহ মায়া ধরে রাখার কোন অবকাশ নেই। পাহাড় এক পায়ে দাঁড়িয়ে কিন্ত মেঘপুঞ্জ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে এ চূড়া ছেড়ে ও চূড়ায়।কখনো কৃষ্ণ কালো মেঘ তো কখনো ধূসর বর্ণের মেঘ।আবার কখনো হালকা ঝিরঝিরে বৃষ্টি।একটু বাদেই মেঘের পর্দা সরিয়ে সূর্যের লালিমা মাখা মুখ।কয়েক শ নতুন নতুন দৃশ্যপট মোবাইল বন্দী করে সকাল আটটায় রুমে ফিরে এলাম। এসে বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যে মন ডুবিয়ে রাখা ,সে এক অপার্থিব অনুভব যা মানুষকে মুক্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়,সাথে অনাবিল আনন্দ।


কেবল মেঘ পাহাড় ছুঁয়ে থাকলেই চলবে না এক জায়গায় বসে।কুর্গের শান্ত শীতল পরিবেশ আর কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা পরখ করার জন্য হোম স্টের রঞ্জিত জির সাথে কথা বলার  পর সাথে সাথে অটো ডেকে দিলেন।বাইরে বেড়াতে গিয়ে আমরা কখনোই লাক্সারি যানবাহনের ভাবনায় থাকি না কেননা তাতে খরচের বহর বেড়ে যায় আর দেখাশোনাতে খরচে ভাটা পড়ে যায়।তবে জায়গা বুঝে অবশ্যই যানবাহনে সামঞ্জস্য আনতে হয়।ড্রাইভার ভাইকে বললাম প্রথমে আমরা টিফিন করে নেবো।তারপর ঘোরাফেরা সেরে লাঞ্চ সেরে নেবো।

টিফিন নিলাম কুর্গের বিখ্যাত আলুর দম,ফুলকো লুচি,নারকেল চাটনী ও বাংঢ়া মাছের ঝোল।ঘুরে দেখার সাথে আরেকটা নেশা যোগ করতে হয়-- যে জায়গায় ঘুরতে যাওয়া সেই  জায়গার খাওয়া পরখ করে নেওয়া।এতে সবার খাদ্যাভ্যাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার সুযোগ গড়ে উঠে।টিফিন ও কফি পান শেষে খরচ পড়লো জন প্রতি একশো দশ টাকা।তবে কুর্গে যাবেন আর বাংঢ়া মাছের ঝোল খাবেন না ,এমনটা যেন না হয়।
রীণা দাস, ত্রিপুরা

(প্রথম পর্ব---চলবে।)



আরশিকথা ভ্রমণ
১৪ই মে, ২০২৩


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.