হীরা মডেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ত্রিপুরা এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের বক্তব্যে তা উল্লেখ করে গেলেন। যদিও এবার নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরার উন্নয়নের প্রশংসা করলেন। প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে মহারাজা বীর বিক্রম এর উন্নত চিন্তাধারার প্রশংসা করেন। মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানের মঞ্চে ওঠেন তিনি। জনগণ বেলা এগারোটা থেকেই মাঠে আসতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী যে রাজ্যে ভাষণ দেন শুরুটা করেন সেই রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা দিয়েই। এখানেও বাংলা ও ককবরক ভাষায় ত্রিপুরাবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। আগেও আগরতলা এসে তাই করেছিলেন। সেই ধারা বজায় রেখেই তিনি প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে হীরা মডেলের প্রসঙ্গ তুলেছেন।
হীরা মানে এইচ আই আর এ। অর্থাৎ হাইওয়ে, ইন্টারনেট, রেলওয়ে এবং এয়ারওয়ে। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ত্রিপুরায় উন্নয়ন হচ্ছে। রাজ্যে এখন সর্বমোট আটটি জাতীয় সড়কের প্রস্তাবনা রয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবার বিস্তৃতি ঘটছে। রেলওয়ে-এর ক্ষেত্রে ত্রিপুরার উন্নতি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে এক্সপ্রেস ট্রেনে ত্রিপুরার এখন প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ঘটছে। সাব্রুম পর্যন্ত রেল। আগরতলা-আখাউড়া রেল এর কাজও দ্রুত এগোচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। আর এয়ারওয়ে অর্থাৎ বিমানপথে উন্নয়নের চিত্র তো এদিনের অনুষ্ঠানই সাক্ষী বহন করে। ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এমবিবি বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে অবতরণের পর মোদি প্রথমে নবনির্মিত টার্মিনাল ভবন ঘুরে দেখেন। তারপর স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে বাটন টিপে এর উদ্বোধন করেন। নবনির্মিত টার্মিনাল ভবন দেখে সন্তুষ্ট মোদি বলেন, ত্রিপুরার সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমানবন্দরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেন পুরো ত্রিপুরাকেই এখানে তুলে আনা হয়েছে সংক্ষিপ্ত আকারে। তাতে ত্রিপুরা সম্পর্কে মানুষের পরিচিতি বাড়বে।প্রধানমন্ত্রী এদিন মহারাজা বীর বিক্রম এর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, মহারাজা বীর বিক্রম স্থাপত্য ও শিক্ষায় ত্রিপুরাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী এদিন ত্রিপুরা বাসীর জন্য আবাস যোজনা সঠিকভাবে কার্যকর করায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি মোদী পূর্বতন সরকারের সমালোচনা করতে ভুলেননি। তিনি বলেন, আগে ত্রিপুরার বিকাশের গাড়িতে ব্রেক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর ভ্রষ্টাচারের গাড়ি চলছিল। আগের সরকারের লক্ষ্য, মানসিকতা কিছুই ছিল না। আর এখন ডবল ইঞ্জিনের সরকার চলছে। মানে সংকল্পের সিদ্ধি, সমৃদ্ধির প্রয়াস, সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন। মোদী বলেন, কেউ এগিয়ে যাবে, কেউ পিছিয়ে থাকবে অর্থাৎ ভারসাম্যহীন উন্নয়ন রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য ঠিক নয়।
মোদী বলেন ত্রিপুরাবাসীর জন্য এই দিনটি আনন্দের। কারণ একসঙ্গে তিনটি উপহার কানেক্টিভিটি, বিদ্যাজ্যোতি এবং গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনা। তিনটি প্রকল্পেরই রিমোট টিপে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এদিন উচ্চবিত্তদের জন্য যেমন হীরা মডেলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলেছেন, তেমনি গ্রামীণ এলাকার গরিব মানুষদের জন্য কিছু দিয়ে গেছেন। মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনা উদ্বোধন করেছেন। এর মাধ্যমে গ্রামে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, আয়ুস্মান ভারতের আওতায় আনা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ইত্যাদি কাজ হবে। তাতে উপকৃত হবেন গ্রামীণ এলাকার মানুষ। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে একশটি স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পে মডেল স্কুল করার প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেছেন মোদী।এদিকে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া মোদীর নেতৃত্বে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ গোটা দেশের কিভাবে উন্নয়ন হচ্ছে সংক্ষিপ্ত আকারে সেই তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন,আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৬টি বিমানবন্দর ছিল। এখন ১৫ টি হয়েছে। হেলিপ্যাড হয়েছে ১৭টি। আগরতলার সঙ্গে কলকাতা, ডিব্রুগড়, গুয়াহাটি, ব্যাঙ্গালোর, দিল্লি, ইম্ফল, শিলং সবদিকে বিমান যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে।প্রসঙ্গত এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে অবস্থানকালে ভাষণ দেন।
এছাড়া বিশিষ্টদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, ভগবান দাস, মেবার কুমার জমাতিয়া, রতন লাল নাথ সহ অন্যান্যরা।
আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সুমিত কুমার সিংহ
৪ঠা জানুয়ারি ২০২২